(বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চলবে না! সম্প্রতি ভারত-সহ নানা দেশকে এই মর্মে একাধিক বার সরাসরি হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাঝেই আবার কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, ট্রাম্পের ‘ভয়ে’ ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি নাকি রাশিয়ার থেকে খনিজ তেল কেনা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু শনিবার সেই দাবি উড়িয়ে দিল সরকারি সূত্র।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইম্সের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এখনই রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করছে না ভারত। শনিবার এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের উচ্চপদস্থ দুই আধিকারিক। জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরেও নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এমনকি, রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর জন্য উপরমহল থেকেও সংস্থাগুলিকে কোনও নির্দেশ পাঠানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবারই ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার জন্য ভারতকে ‘জরিমানা’ও দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জরিমানার অঙ্ক সম্পর্কে অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সেই আবহেই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। তাতে দাবি করা হয়, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড নাকি গত এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনা স্থগিত রেখেছে। যদিও শুক্রবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানান, এমন কোনও পদক্ষেপ সম্পর্কে কেন্দ্রের কাছে কোনও খবরই নেই! রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়েও আগের অবস্থানে অনড় থাকতে দেখা যায় রনধীরকে। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে কে কী দাম নিচ্ছে এবং বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই আমরা আমাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে থাকি।’’ অর্থাৎ, তেল আমদানির ক্ষেত্রে যে জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে কথা কার্যত স্পষ্ট করে দেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। সেই আবহেই ফের সরকারি সূত্র জানাল, রাশিয়ার থেকে এখনই তেল আমদানি বন্ধ হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। ভারতের এই প্রয়োজনীয় তেলের বেশির ভাগই আসে বাইরে থেকে। এর আগে ভারত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে তেল কিনত। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার বদলে গত কয়েক বছর ধরে তেল আমদানির জন্য মস্কোর দিকে ঝুঁকেছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষের আবহে বিশ্বের জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই সময় থেকেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে সমীকরণ। তা ছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব মস্কোর উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। তখন থেকে তেল কেনার উপর বিপুল ছাড় দিতে শুরু করে রাশিয়া। ফলে রাশিয়ার কাছ থেকেই অধিক ছাড়ে, সস্তায় খনিজ তেল আমদানি শুরু করে ভারত। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর রাশিয়া থেকে ৩৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিক জাহাজের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণকারী সংস্থা ‘কেপলার’-এর তথ্য অনুসারে, গত জুন মাসেও রাশিয়া থেকে দৈনিক ২০.৮ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারতের শোধনাগারগুলি।