গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত বাতানুকূল কামরায় ভুবনেশ্বর যাচ্ছিলেন এক মহিলা। ট্রেন ছাড়ার পরে অ্যাটেন্ড্যান্ট তাঁকে বেডরোল দিয়ে যান। রাতে বেডরোলটি খুলে চাদর-বালিশ বার করতে না-করতেই ভয় আর বিরক্তিতে শিউরে ওঠেন মহিলা। বেডরোলে নাকি উগ্র অ্যালকোহলের গন্ধ পাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে জানান চলন্ত ট্রেনের টোল-ফ্রি সুরক্ষা-হেল্পলাইনের ১৮২ নম্বরে।
রেলের কন্ট্রোলে অভিযোগ পৌঁছতেই মাঝপথে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করেন আরপিএফ-কর্মীরা। ওই মহিলাকে দেওয়া চাদর, বালিশ-সহ গোটা কামরায় তল্লাশিও চালানো হয়। মদের বোতল বা গন্ধ কোনওটাই মেলেনি। মহিলা কিন্তু তখনও ভয়ে ভয়ে আছেন। এবং মদের তীব্র গন্ধ যে পেয়েছেন, সেই অভিযোগে তিনি অনড়। অগত্যা আরপিএফ-কর্মীরা বাকি রাস্তাটা তাঁকে আর একা ছাড়েননি। কামরায় প্রহরার ব্যবস্থা করে তাঁকে পৌঁছে দেন ভুবনেশ্বরে।
চলন্ত ট্রেনে ১৮২ নম্বরটি যাত্রীদের, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে চালু করেছে রেল। সেই নম্বর এবং তার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা যে যথেষ্ট তৎপর, ওই মহিলার অভিযোগের পরে তাঁদের সক্রিয়তাই তার প্রমাণ বলে রেলের দাবি। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। ওই নম্বরে নিরাপত্তা চাওয়ার বদলে অন্যান্য বিষয়ে বেশি কল আসায় কিছুটা বিব্রত রেল। মহিলা রেলের বিছানায় কেন মদের গন্ধ পেলেন, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু কর্মীদের নাকে সেই গন্ধ ধরা পড়েনি বা সেই গন্ধের উৎস হিসেবে কামরায় সন্দেহজনক কিছুই মেলে পাননি তাঁরা। তা সত্ত্বেও ১৮২-তে ফোন করা হয়েছিল এবং তার জেরে ট্রেনের অনেকটা দেরি হয়ে যায়। রেলের বক্তব্য, এই ধরনের অনেক ফোনকলের পরে তড়িঘড়ি ছুটে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তার কোনও অভিযোগই নয়। পরিষেবার কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি-ঘাটতি নিয়ে নালিশ জানাতে ফোন করা হয়েছে। অথচ ওই হেল্পলাইন শুধু সুরক্ষার জন্যই।
রেলের খবর, পরিষেবা ছাড়াও মালপত্র চুরির অভিযোগ জানাতে সুরক্ষার ওই নম্বরে ফোন আসছে। অথচ চুরির অভিযোগ জানাতে হয় কোনও স্টেশনের থানায়। রেল সূত্রের খবর, দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ২০১৫ সাল থেকে এ-পর্যন্ত ১৮২-তে কল এসেছে ১৮২টি। বেশির ভাগই চুরি অথবা পরিষেবার ঘাটতি নিয়ে।
পূর্ব রেলে কিছু হলেও মহিলা-নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে কল এসেছে ৩৬৩টি। তার মধ্যে ১১৪টি মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত। মেট্রোয় রোজই আসে অজস্র ফোন। কিন্তু একটিও নিরাপত্তা চেয়ে নয়। সব ফোনকলই অন্য বিষয় নিয়ে। মেট্রোর আলাদা একটি নিজস্ব মোবাইল নম্বরও রয়েছে। সেখানেও একই অবস্থা।
রেলকর্তাদের বক্তব্য, নিরাপত্তা-বহির্ভূত নানা কারণে এই ধরনের ফোন আসায় অনেক সময়েই ট্রেন দাঁড় করিয়ে দিতে হচ্ছে। এই সমস্যা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যাত্রীদেরও বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। তাঁরা সচেতন না-হলে এমনটা চলতে থাকবে এবং দেরি হবে ট্রেনের।
যাত্রীরা সুরক্ষা ছাড়া অন্য কারণে কেন ফোন করছেন ওই নম্বরে?
রেলকর্তাদেরই একাংশের বক্তব্য, ট্রেনে পরিষেবার ঘাটতিতে যাত্রীরা তিতিবিরক্ত। কিন্তু চটজলদি অভিযোগ জানানোর মতো হাতের কাছে কাউকে পান না। তাই অনেকে নিরাপত্তা হেল্পলাইনে ফোন করে অন্য অভিযোগও জানাতে বাধ্য হচ্ছেন।
চলন্ত ট্রেনে ও স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং বিশেষ করে মহিলা-নিগ্রহ কমানোর জন্যই বছরখানেক আগে টোল-ফ্রি ১৮২ নম্বর চালু করে রেল মন্ত্রক। যাতে যাত্রীরা চটজলদি অভিযোগ জানাতে পারেন এবং খবর পেয়েই রেল পুলিশ বা আরপিএফ যাতে ট্রেনে উঠে সমস্যা মেটাতে পারে। কিন্তু যাত্রীদের একাংশ ওই নম্বরকে অন্যান্য অভিযোগ জানাতে ব্যবহার করায় মাঝেমধ্যে বিপত্তি দেখা দিচ্ছে বলে জানান রেলকর্তারা।
ওই নম্বর ছাড়া যাত্রী-সুরক্ষায় আর কী ব্যবস্থা আছে রেলে?
রেলের দাবি, দেশ জুড়ে ৪৭০০টি দূরপাল্লার ট্রেনে আরপিএফ বা জিআরপি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলা স্পেশ্যালে দেওয়া হয়েছে আরপিএফ ও জিআরপি-র বিশেষ প্রমীলা বাহিনী। টোল-ফ্রি ১৮২ নম্বর চালু করার পাশাপাশি ৩৪৪টি স্টেশনে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন ট্রেনে মহিলা কামরায় পুরুষদের ওঠা বন্ধ করতেও নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।