Deepika Padukone

দেশের ভিত্তি এটা নয়, বলছেন ক্ষুব্ধ দীপিকা

পদ্মাবতের সময়ে দীপিকার নাক কাটার হুমকি দিয়েছিল একটি সংগঠন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই আজ সেই সময়কার কথা উঠে এসেছে অভিনেত্রীর কথায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১৫
Share:

জেএনইউয়ে দীপিকা পাড়ুকোন। ফাইল চিত্র

রাগ হচ্ছে দীপিকা পাড়ুকোনের। কষ্টও হচ্ছে। চার পাশের ঘটনা দেখে তাঁর মনে হচ্ছে, এ-সব তাঁর দেশের ভিত্তি নয়।

Advertisement

গত কাল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার পরেই টুইটারে দীপিকাকে বয়কটের ডাক দেন বিজেপির মুখপাত্র তাজিন্দর সিংহ বাগ্গা। দীপিকার নতুন ছবি ‘ছপাক’-এর টিকিট বাতিলের হিড়িক পড়ে যায় গেরুয়া শিবিরে। আজ গোটা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একটি চ্যানেলে দীপিকাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার যা বলার তা দু’বছর আগেই বলেছিলাম, যখন ‘পদ্মাবত’ মুক্তি পেয়েছিল। আজ যা দেখছি, তাতে আমার কষ্ট হচ্ছে। যে-কেউ যা খুশি বলে পার পেয়ে যাবে— আমি আশা করব, এটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে না।’’

পদ্মাবতের সময়ে দীপিকার নাক কাটার হুমকি দিয়েছিল একটি সংগঠন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই আজ সেই সময়কার কথা উঠে এসেছে অভিনেত্রীর কথায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার ভয় করছে। দুঃখও হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের ভিত্তি নয়।’’ জেএনইউয়ে হিংসার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, তাতে আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। আরও খারাপ হল, কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।’’

Advertisement

গেরুয়া-শিবিরের আক্রমণ অবশ্য অব্যাহত। উগ্র সমর্থকদের পাশাপাশি দীপিকার বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। যেমন বিজেপির সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা বি এল সন্তোষ। আরএসএস এবং বিজেপির মধ্যে তিনিই সমন্বয়কারী ব্যক্তি। আজ সকালে নিজেই টুইটারে দীপিকার ছবি বয়কটের ডাককে সমর্থন করেছেন সন্তোষ। দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি মাত্র দু’দিন আগেই নিজের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তারিফও পেয়েছিলেন। আজ সেই বিধুরিও ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-কে সমর্থন করার জন্য দীপিকার ছবি বয়কট করার আবেদন করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বলিউড তারকাদের উচিত, নিজেদের ছবির মাধ্যমে যুবসমাজকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। উল্টে তাঁকে ‘দেশবিরোধীদের’ সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, যা অনুচিত।

এবং এখানেই থামছে না বিজেপি। দীপিকার প্রায় এক দশক আগেকার একটি ভিডিয়ো খুঁজে বার করেছে তারা। সেখানে এক সাক্ষাৎকারে

দীপিকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘কোনও যুব নেতার কথা বলবেন, যিনি ভাল কাজ করছেন?’’ দীপিকার উত্তর ছিল, ‘‘রাজনীতির বিষয়ে বেশি জানি না। যেটুকু টিভিতে দেখি, তাতে রাহুল গাঁধী আমাদের দেশের জন্য যা করছেন, তা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আশা করি, এক দিন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।’’ দীপিকাকে তখন প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনি চান রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রী হন? কেন বিশেষ করে তিনি?’’ দীপিকা বলেছিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই (প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে)। ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তিনি যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন।’’

বিজেপির কর্মকাণ্ড দেখে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘বিজেপি কি মনে করে, ছবির প্রচারের জন্য দীপিকার নাগপুরের আরএসএস সদর দফতরে যাওয়া উচিত ছিল? বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন না? ছাত্রদের রোষ দূর করার চেষ্টা করেছেন
তাঁরা? উল্টে তো আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই এফআইআর হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন, দু’দিন আগেও বিজেপি নেতা শিবরাজ
সিংহ চৌহান দীপিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন, কারণ অ্যাসিড হামলায় আক্রান্তের সঙ্গে দীপিকা নিজের জন্মদিন পালন করেছিলেন। আর কাল জেএনইউয়ে চলে যাওয়ার পরেই দীপিকা রাতারাতি ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হয়ে গেলেন কী করে? কংগ্রেস জানাচ্ছে, এর আগেও যত ছবি বয়কট হয়েছে, তার অধিকাংশই বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছে।
নেট-দেওয়ালে দীপিকার ছবি বয়কটের পাল্টা স্লোগান চলছে, ‘হম দেখেঙ্গে।’ ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি বলেছেন, ‘‘আমি খুব বেশি হিন্দি ছবি দেখি না। কিন্তু এই সমস্ত বয়কটের ডাক দেওয়ার ফলে আমার মতো মানুষেরাই দীপিকার ছবি দেখতে যাবে।’’ ইতিমধ্যেই জেএনইউয়ের আহত ছাত্র-নেত্রী ঐশী ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছেন কানিমোঝি।

পরিস্থিতি একটু সামাল দিতে মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর অবশ্য বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনও ব্যক্তি বা শিল্পী যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। নিজের বক্তব্য পেশ করতে পারেন। এতে কোনও আপত্তি নেই।’’ কিন্তু আপনাদের দলের নেতারাই তো বয়কটের ডাক দিচ্ছেন? আপনার কথা আপনারই নেতা মানবেন তো? জাভড়েকর বলেন, ‘‘আমি তো এমন কিছু শুনিনি, পড়িওনি, কে কোথায় কী বলেছেন। আমি এখন বিজেপির মন্ত্রী ও নেতা হিসেবেই কথা বলছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন