পাতালে বৃহত্তম জলসেচ প্রকল্প গড়ছে তেলঙ্গানা

গোদাবরী এই রাজ্যে বইছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায়। অথচ, তেলঙ্গানার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান হল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৬৫০ মিটার উঁচুতে। যে কারণে তেলঙ্গানার বিস্তীর্ণ এলাকা বরাবরই রুখা-শুখা। এই ছবি পাল্টাতে ক্ষমতায় এসেই জলসেচ প্রকল্পে হাত দিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

করিমনগর (‌তেলেঙ্গানা) শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

নির্মীয়মাণ কালেশ্বরম সেচ প্রকল্প। —নিজস্ব চিত্র

সূর্যের ক্ষীণ রশ্মিটুকু মিলিয়ে গিয়েছে মিনিট পাঁচেক আগে। মোবাইলের টাওয়ার নিখোঁজ। নিকষ অন্ধকার সুড়ঙ্গে ভরসা কেবল গাড়ির হেডলাইট। হু হু করে ছুটে চলেছি। বলা ভাল, অভিকর্ষের টানে নেমে চলেছি জলকাদায় ভর্তি সুড়ঙ্গ দিয়ে। চাকা পিছলে যাচ্ছে, গোঁ গোঁ করছে ইঞ্জিন, ছিটকাচ্ছে পাথর-মাটি। ফের গিয়ার বদল করে করে ছুটছে গাড়ি। সুড়ঙ্গের দু’পাশে সাইনবোর্ড মিনিটে মিনিটে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের ঠিক কতটা নীচে নেমেছি আমরা। দু’শো মিটারের সাইন বোর্ড পেরিয়েছি বেশ কিছুক্ষণ আগেই। লক্ষ্য ৩৩০ মিটার নীচে নামা। যেখানে তৈরি হচ্ছে ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলসেচ প্রকল্প।

Advertisement

সুড়ঙ্গের ভুলভুলাইয়ার জট কাটিয়ে, হাঁটু সমান জল পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছলাম শেষ বিন্দুতে। এখানে ৩২৪ মিটারের আইফেল টাওয়ারকে দাঁড় করিয়ে দিলেও মাটির উপরে মাথা তুলতে পারবে না। মাইকে গমগম করছে নির্মাণ সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স লিমিটেড (এমইআইএল)-এর অধিকর্তা বি শ্রীনিবাস রেড্ডির গলা, ‘‘আসুন পরিচয় করিয়ে দিই, কালেশ্বরম প্রকল্পের সঙ্গে। গোদাবরী নদী-নির্ভর এই প্রকল্পটি হতে চলেছে দেশের তথা বিশ্বের বৃহত্তম জলসেচ প্রকল্প।’’ এই প্রকল্পকে ভর করেই লোকসভা ভোটে রাজ্যে ভাল ফল করার জন্য ঝাঁপাতে চাইছে কেসিআরের দল টিআরএস। রাজ্য সরকারের প্রবল তাড়ায় এমইআইএল-কে নির্মাণের কাজ শেষ করতে হয়েছে মাত্র দু’বছরে। লক্ষ্য, দীপাবলির পরেই প্রকল্পটি চালু করা।

সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম, কিংবা নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের বুলেট ট্রেন প্রকল্প— বিভিন্ন সময়ে জমি অধিগ্রহণের সমস্যায় জেরবার হতে হয়েছে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারকে। দিনের আলো দেখেনি জমি অধিগ্রহণ বিল। কিন্তু সবে জন্ম নেওয়া এই রাজ্যে এত দ্রুত এত বড় প্রকল্প গড়ে জমি অধিগ্রহণের ভাষ্যটিই বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তেলঙ্গানার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।

Advertisement

গোদাবরী এই রাজ্যে বইছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায়। অথচ, তেলঙ্গানার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান হল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৬৫০ মিটার উঁচুতে। যে কারণে তেলঙ্গানার বিস্তীর্ণ এলাকা বরাবরই রুখা-শুখা। এই ছবি পাল্টাতে ক্ষমতায় এসেই জলসেচ প্রকল্পে হাত দিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর। গোটা প্রকল্পটি ভাগ করা হয় আটটি প্যাকেজে। অষ্টম প্যাকেজটিই বিশ্বের বৃহত্তম জলসেচ পাম্প প্রকল্প। গোদাবরীর লাগোয়া মেডিগাড্ডা জলাধার থেকে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ দিয়ে জল এসে জমা হবে এখানে। এমইআইএল-এর অধিকর্তা রেড্ডি বলেন, ‘‘প্রকল্প শুরু হলে গাড়ি চলাচলের সুড়ঙ্গ দিয়ে আসা জলে ৩৩০ মিটার গভীর অংশটি ডুবে গিয়ে পরিণত হবে জলাধারে। ১৩৯ মেগাওয়াটের পাম্প বসিয়েছে ভারত ইলেকট্রনিক্স। যা দিনে ২০ লক্ষ কিউবিক ফুট জলের জোগান দেবে আন্নারাম ও সান্ডিলা জলাধারে।’’

এর পর অভিকর্ষজ টানকে ব্যবহার করে ৩৩০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ, ১৮৩২ কিলোমিটার লম্বা খাল ও সবশেষে পাইপের এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জল পৌঁছবে চাষের খেতে। সিঞ্চিত হবে ১৩টি জেলার মোট ৩০ লক্ষ হেক্টর জমি। উপকৃত হবেন ১০ লক্ষেরও বেশি কৃষক। জমি হবে দো-ফসলি। জলের অভাব ঘুচবে হায়দরাবাদ-সেকেন্দ্রাবাদ। রাজ্যের সেচমন্ত্রী টি হরিশ রাওয়ের কথায়, ‘‘এই প্রকল্পে মেডিগাড্ডা জলাধারকে কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচশো কিলোমিটার পরিধিতে জল সমস্যা মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন