নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। আজ তিনি বলেন, ‘‘অসমে বসবাসকারী প্রত্যেক নাগরিক অসমবাসী। অসমিয়া নন। এ কথা তরুণ গগৈয়ের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’’ বঙ্গভাষীরা অসমিয়া শিখতে চায় না বলে গগৈয়ের মন্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেন কমলাক্ষবাবু।
এ দিন কার্যত গগৈকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘অসম কংগ্রেস কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ সব জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এগিয়ে চলা একটি সংগঠন।’’ তাঁর বক্তব্য, তরুণ গগৈকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু বঙ্গভাষী হিন্দু শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে গগৈয়ের কথায় তিনি ‘আহত’ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর বিরোধিতা করে তরুণ গগৈ বলেছিলেন— অসমের হিন্দু-বাঙালিরা অসমিয়া ভাষা শিখতে চান না। তাঁরা সন্তানদের অসমিয়া পড়াতে চায় না। তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অসমিয়া ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছেন। যা হিন্দু বঙ্গভাষীরা কখনও করেননি। সেই কারণে হিন্দু বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
গগৈয়ের এই বক্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অসমে থাকলে অসমিয়া শিখতে হবে, তেমন কোনও আইন ছিল না। বরাক সফরে এসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বাংলাতেই কথা বলেছেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, হিন্দু শরণার্থীদের প্রথম পাতার পর
নাগরিকত্ব দিতে তাঁর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এ বার তিনি ভোল পাল্টে ফেলেছেন।’’ কমলাক্ষের বক্তব্য, নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনীর বিষয়ে আলোচনার জন্য কমিটি গড়েছেন রাহুল গাঁধী। সাংসদ সুস্মিতা দেব তার সদস্য।
তরুণ গগৈয়ের বক্তব্য নিয়ে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশীকেও নালিশ জানান কমলাক্ষবাবু। সুস্মিতাদেবী, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেন। কমলাক্ষবাবু জানান, ২৫ অক্টোবরের মধ্যে গুয়াহাটিতে তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা নিজেদের অবস্থান জানাবেন।
এ বিষয়ে কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব সরাসরি কারও নাম নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা একটি জাতীয় পর্য়ায়ের বিল। কংগ্রেস জাতীয় দল। ফলে এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়েই সিদ্ধান্ত হবে। বিলের পক্ষে থাকবে না বিপক্ষে, তা ঠিক করবে কংগ্রেস সংসদীয় দল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আইনসভার বাইরে থেকে বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলছেন, তাঁদের বুঝতে হবে, এই বিলে নাগরিকত্বের অধিকারের কথা বলা নেই। ফলে বিরোধের জায়গা অহেতুক। বিলে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানো যাবে।’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র। কিন্তু হাইকম্যান্ড এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার নির্দেশ দেয়নি। তরুণ গগৈ হোক বা আসু, আমি মনে করি এ ধরনের বক্তব্য দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।’’ সুস্মিতাদেবী জানান, বরাক উপত্যকার কংগ্রেস সাংসদ, বিধায়করা এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুণ বরার সঙ্গে কথা বলবেন।