Karnataka CM

Karnataka: ‘ভুয়ো’ নিউটন! মাধ্যাকর্ষণের শিকড় রয়েছে বৈদিক অঙ্কে, দাবি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর

বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের ক্ষোভ, শুধু এটুকুতেই থামছে না কর্নাটকের বিজেপি সরকার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৭:৩৯
Share:

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই।

পাইথাগোরাসের উপপাদ্য আসলে ভুয়ো! ভুয়ো নিউটনের মাধ্যকর্ষণ তত্ত্বের আপেল পড়ার ঘটনাও! ফলে এই সব ‘ভুয়ো’ খবর নিয়ে এ বার থেকে প্রশ্ন তুলতেই পারবেন কর্নাটকের পড়ুয়ারা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতিতে রূপায়নের জন্য এমনই সুপারিশ করেছে কর্নাটকের বিজেপি সরকার নিয়োজিত কমিটি।

Advertisement

বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের ক্ষোভ, শুধু এটুকুতেই থামছে না কর্নাটকের বিজেপি সরকার। সূত্রের খবর, নতুন শিক্ষা নীতি অনুযায়ী ত্রিভাষা শিক্ষায় ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষার পাশাপাশি সংস্কৃতকে তৃতীয় ভাষা করার সুপারিশ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে চূড়ান্ত বিতর্কিত মনুস্মৃতিকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও। একই ভাবে অর্থনীতিতে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, মহাভারতের শান্তিপর্ব এবং প্রাচীন ভারতের হিসাব পরীক্ষা পদ্ধতি, জীববিজ্ঞানে ত্রিদোষ তত্ত্ব, ভূগোলে পৌরাণিক আমলের ভূগোল পড়ানোর মতো সুপারিশও করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত সুপারিশে কর্নাটকের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান মদন গোপালের মতে, মাধ্যাকর্ষণ এবং পাইথাগোরাসের উপপাদ্যের শিকড় রয়েছে বৈদিক অঙ্কে! এ নিয়ে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনেও অনেক তথ্য আছে বলে দাবি তাঁর। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাই বলে এমন নয় যে সব মানতেই হবে।

কর্নাটকের বিজেপি সরকারের এমন নানা প্রস্তাবেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শিক্ষাবিদেরা। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল, শুধু যে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলিকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে, তা নয়। একই সঙ্গে শিক্ষা-সহ সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত গৈরিকীকরণের পরিকল্পনাও করছে সঙ্ঘ পরিবার। মোদী দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই পরিকল্পনা গতি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বারে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে সিলেবাসে ব্যাপক রদবদলের নানা প্রস্তাব সেই আশঙ্কাই বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

শিক্ষাবিদদের একাংশের অভিযোগ, সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি বরাবরই মনুবাদী নীতির সমর্থক। চূড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক, ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারা তাদের। সে কারণেই শিক্ষা থেকে ধর্মাচরণ, সব ক্ষেত্রে গৈরিক অনুপ্রবেশ ঘটছে দ্রুত। এতে পরবর্তী প্রজন্মের বড় ক্ষতি হবে। তা ছাড়া ভারত বহু ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির দেশ। হাজার বছরের সেই সভ্যতাকে ভুলিয়ে বেদ-পুরাণ-মনুবাদ-অবৈজ্ঞানিক ভাবধারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি। বিরোধীদের অভিযোগ, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড গড়ে তোলে। মোদী সরকার সেই মেরুদণ্ডই ভেঙে দিতে মরিয়া। সে কারণেই নতুন করে ইতিহাস লেখার হুঙ্কার ছাড়েন মোদী মন্ত্রিসভার ‘নম্বর-টু’ অমিত শাহ। কর্নাটকেই স্কুল পাঠ্যে গান্ধী, অম্বেডকর, নেহরুর লেখা সরিয়ে ঠাঁই পায় আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার, হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনায়ক সাভারকরের লেখা।

উদ্বিগ্ন কর্নাটকের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, দক্ষিণ ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের সফল ল্যাবরেটরি হয়ে উঠেছে কর্নাটক। দেশের আইটি-হাব এখন হেট-হাব হয়ে উঠেছে। শিক্ষাজগতে অবৈজ্ঞানিক এবং মনুবাদী ভাবধারা প্রচার করে বিজেপি তথা হিন্দুত্ববাদীরা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ভাঙতে সক্রিয়।

বিরোধীরা যা-ই বলুন, শিক্ষাবিদেরা যতই সরব হন, তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কর্নাটকের গেরুয়া শিবিরের। তাঁদের বক্তব্য, সবই তো ব্যাদে আছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন