আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত কন্নড় কথাসাহিত্যিক, আইনজীবী এবং সমাজকর্মী বানু মুশতাক। ছবি: পিটিআই।
দশেরা উৎসব নিয়ে কর্নাটকের রাজনীতি সরগরম। উৎসবের সূচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারজয়ী বানু মুশতাককে। আর তার পর থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দশেরা উৎসব। মাইসুরুর চামুণ্ডি হিল মন্দির থেকে রাজ্য জুড়ে এই উৎসবের সূচনা হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, এ বছর এই জনপ্রিয় উৎসবের সূচনা করবেন বুকারপ্রাপ্ত লেখক বানু মুশতাক। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। কেন বানুকে দিয়ে উৎসবের সূচনা করানো হচ্ছে, এই বিতর্ক শুরু হতেই বানুর সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অবদানের কথা তুলে ধরে তাঁকে ‘প্রগতিশীল চিন্তাবিদ’ বলে উল্লেখ করে পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তা-ই নয়, সূত্রের খবর, লেখক বানুকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করাও ঠিক নয় বলেই জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ২০১৭ সালে দশেরা উৎসবের উদাহরণ টেনে এনে পাল্টা বলা হয়েছে, কবি তথা অধ্যাপক কেএস নিসারও তো সেই বছরে দশেরা উৎসবের সূচনা করেছিলেন? তা হলে লেখক মুস্তাক বানুকে নিয়ে এত আপত্তি কিসের? এর পরই বলা হয়, বানু মুস্তাক এ বছরের দশেরা উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
বানুকে এ বারের দশেরা উৎসবের অতিথি হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ঘোরতর আপত্তি জানাতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শোভা করন্দলাজে জানান, দশেরা হিন্দুদের উৎসব। এখানে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে সরকার। যা কখনওই কাম্য নয়। আবার বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্যের অভিযোগ, লেখক বানুকে এই উৎসবে শামিল করে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। যদিও বিরোধী দল বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির অভিযোগকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ সরকার। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মাইসুরু-কোদাগুর সাংসদ তথা মাইসুরু রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজ ওয়াদিয়ার। তিনি জানিয়েছেন, চামুণ্ডেশ্বরী এবং ভুবনেশ্বরী দেবীর প্রতি বানুর আস্থা রয়েছে। তাই হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে বানুর শামিল হওয়ায় কোনও বিরোধিতা করা উচিত নয় বলেই মত তাঁর।
এই বিতর্কের মধ্যেই বানুর একটি পুরনো ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। কন্নড় ভাষা এবং ভুবনেশ্বরী নিয়ে বানুর মন্তব্য তুলে ধরে ময়দানে নেমেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। রাজ্য জুড়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বাড়তে থাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর পাল্টা জবাব দেন, ‘‘বিরেধিতা করা ঠিক নয়। এটি ধর্মীয় বিষয় নয়। দশেরা জাতীয় উৎসব নয়।’’ তাঁর আস্থা নিয়ে যখন বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী দলগুলি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, তখন বানু বলেন, ‘‘দেবী চামুণ্ডেশ্বরীকে আমি সম্মান করি। রাজ্যবাসী তাঁকে মা বলেন। তাঁদের ভাবাবেগকেও সম্মান করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দশেরা উৎসবে আগেও আমি যোগ দিয়েছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেক বার এই উৎসবে এসেছি। এখন অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি তাতেই খুশি।’’
৭৭ বছর বয়সি কন্নড় কথাসাহিত্যিক, আইনজীবী ও সমাজকর্মী বানু মুশতাককে এ বার আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। এই প্রথম কন্নড় ভাষার কোনও লেখিকা এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মান পেলেন। ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের এই দীর্ঘ সময়সীমায় বানুর লেখা অসংখ্য গল্পগুলি থেকে ১২টি বেছে নেন অনুবাদক দীপা ভাস্তি। সেই ১২টি গল্পের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ‘হার্ট ল্যাম্প’ নামে। কর্নাটকের মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম বানুর। স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল এক উর্দুভাষী ধর্মীয় স্কুলে। কিন্তু কয়েক বছর পরেই বাবা ভর্তি করে দেন সরকারি স্কুলে। সেখানে পঠনপাঠনের মাধ্যম ছিল কন্নড়। সেই ভাষাকেই পরে আপন করে নেন বানু। লেখালেখি শুরু করে দেন স্কুলজীবন থেকেই।