Transgender Parent

‘গর্ভধারক পুরুষ’ সন্তানের ‘মা’ বলে পরিচয় দিতে বাধ্য নন! রূপান্তরকামীদের পক্ষেই রায় ঘোষণা কেরল হাই কোর্টের

সোমবার বিচারপতি জিয়াদ রহমান এএ-এর অবকাশকালীন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। কোঝিকোড় পুর কর্তৃপক্ষকে ওই রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানের জন্ম শংসাপত্রে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’ শব্দ দু’টিকে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ‘অভিভাবক’ (পেরেন্ট) দিয়ে প্রতিস্থাপনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ১২:০০
Share:

রূপান্তকামী দম্পতি জাহাদ ও জিয়া। — ফাইল চিত্র।

রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানদের জন্মশংসাপত্রে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’-র পরিবর্তে ‘অভিভাবক’ (পেরেন্ট) হিসাবে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। সোমবার এমনটাই রায় দিয়েছে কেরালা হাই কোর্ট।

Advertisement

সোমবার বিচারপতি জিয়াদ রহমান এএ-এর অবকাশকালীন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। কোঝিকোড় পুর কর্তৃপক্ষকে এক রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানের জন্ম শংসাপত্রে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’ শব্দ দু’টিকে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ‘অভিভাবক’ দিয়ে প্রতিস্থাপনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ওই মামলায় আবেদনকারীদের নাম জাহাদ এবং জিয়া পাভাল। জাহাদ একজন রূপান্তরকামী পুরুষ। জিয়াও একজন রূপান্তরকামী মহিলা। সম্ভবত এঁরাই কেরলের প্রথম রূপান্তরকামী দম্পতি, যাঁরা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সন্তানের জন্ম দেন জাহাদ। অবশ্য তার আগে থেকেই জাহাদের সন্তানধারণের খবরটি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল সারা দেশে, কারণ, ভারতের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন ঘটনা ছিল প্রথম।

সন্তানের জন্মের পর প্রাথমিক ভাবে কোঝিকোড় পুরসভা জাহাদ ও জিয়ার রূপান্তরিত লিঙ্গপরিচয় উপেক্ষা করে সন্তানের জন্মশংসাপত্রে জাহাদকে ‘মা’ এবং জিয়াকে ‘বাবা’ হিসাবে নথিভুক্ত করে। এর পরেই ‘বাবা’ও ‘মা’-র পরিবর্তে ‘অভিভাবক’ হিসাবে স্বীকৃতি চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। আদালতে তাঁদের হয়ে সওয়াল করেন কেরলের প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী পদ্মা লক্ষ্মী। তিনি আদালতে যুক্তি দেন, জাহাদ ও জিয়ার অনুরোধ মেনে নিতে অস্বীকার করা সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদের অধীনে তাঁদের সমানাধিকারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘ব্যক্তি’ শব্দের অর্থ কেবল পুরুষ বা মহিলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন রূপান্তরকামীও সব রকম অধিকার এবং আইনি সুরক্ষার অধিকারী। সে কথাই হাই কোর্টকে মনে করিয়ে দেন পদ্মা লক্ষ্মী। শেষমেশ জাহাদ ও জিয়ার পক্ষেই রায় দেয় কেরল হাই কোর্ট।

Advertisement

দম্পতির দাবি ছিল, জাহাদ জৈবিক উপায়ে সন্তানের জন্ম দিলেও দীর্ঘ দিন ধরে ‘পুরুষ’ হিসাবেই নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন এবং সেই মতোই জীবনযাপন করেছেন। ফলে তাঁদের ‘মা’ ও ‘বাবা’ হিসাবে নিজেদের চিহ্নিত করতে বাধ্য করা কেবল তাঁদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের বিরোধিতাই নয়, বরং পরবর্তী সময়ে তাঁদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে আধার, প্যান কার্ড এবং পাসপোর্টের মতো সরকারি নথি তৈরির ক্ষেত্রেও জীবনের প্রতিটি পদে বিভ্রান্তি এবং বৈষম্যের শিকার হওয়ার পথে ঠেলে দেওয়া। এতে শুধু জাহাদ ও জিয়ার মৌলিক অধিকারই লঙ্ঘিত হবে না, বরং তাঁদের সন্তানেরও মৌলিক অধিকার খর্ব হবে। দু’পক্ষের যুক্তি শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক রূপান্তরকামী ব্যক্তির তাঁর নিজস্ব লিঙ্গপরিচয় নিয়ে বাঁচার অধিকার রয়েছে। এর পরেই উচ্চ আদালত কোঝিকোড় পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে ওই দম্পতির সন্তানের নতুন জন্মশংসাপত্র জারি করতে হবে, যাতে জাহাদ ও জিয়ার লিঙ্গ উল্লেখ না করে তাঁদের কেবলমাত্র ‘অভিভাবক’ হিসাবে নথিভুক্ত করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement