Saffron

কাশ্মীরি কেশরে জিআই ট্যাগ, মোদীর ঘোষণায় ইরানকে হারানোর প্রস্তুতি

দামে সস্তা, স্বাদ-গন্ধ আর রঙেও কিছুটা কমজোরি ইরানের কেশরকে কাশ্মীরি কেশরের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কাশ্মীরি কেশর নাম দিয়ে। ফলে উপযুক্ত দাম পায় না আসল কাশ্মীরি কেশর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:২৪
Share:

গাঢ় রঙের জন্যই বিশ্বসেরা কাশ্মীরের জাফরান।—প্রতীকী ছবি

কাশ্মীরি কেশরকে ভৌগলিক পরিচিতি আগেই দিয়েছেন। এ বার তার বিশ্বায়ণের পরিকল্পনা করছেন। রবিবার তাঁর ‘মন কি বাত’-এ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী বললেন, ‘‘বর্ণে-গন্ধে জম্মু ও কাশ্মীরের ‘জাফরান’ পৃথিবী সেরা। বিরল এই কেশরকে জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগলিক পরিচিতি দেওয়ায় এর রফতানি বাড়বে। আরও আত্মনির্ভর হবে ভারত। উপকৃত হবেন কেশর ফলানো কৃষকেরা।’’

Advertisement

খরা, উষ্ণায়ণের সমস্যার পাশাপাশি একাধিক কারণে গত প্রায় দু’দশক ধরে ক্রমশ কমেছে কাশ্মীরি কেশরের ফলন। কাশ্মীরের কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যই বলছে কেশরের ফলন ১৬ মেট্রিক টন থেকে কমে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে, ৫.৬ মেট্রিক টনে। কাশ্মীরি কেশর ফলনের সঙ্গে জড়িত কম করে ৩০ হাজার কৃষক পরিবার এই ভৌগলিক পরিচিতির ফলে উপকৃত হবেন। মন কি বাত-এ তাই দেশবাসীকে তিনি অনুরোধ করেছেন, এ বার থেকে যখনই বাজারে কেশর কিনতে যাবেন, খোঁজ করবেন কাশ্মীরি জাফরানের।

উর্দুতে কাশ্মীরি কেশরকে বলা হয় ‘জাফরান’। স্বাদ, গন্ধ এবং রঙের জন্য এই কাশ্মীরি জাফরান বিশ্বের সেরা বলে দাবি করা হয়। বিশেষ করে তার রঙের জন্য। কাশ্মীরি জাফরানের গাঢ় বেগুনি লাল রংই এর বিশেষত্ব। বিরিয়ানি বা জাফরানি পোলাও কিংবা ভুরভুরে সুবাসের কোনও মিষ্টিতে যে কাঁচা হলুদ রং দেখা যায়, তা এই কেশরেরই অবদান। কাশ্মীরি কেশরের এই গাঢ় রং‌ ও সুবাসের কারণ হল এতে থাকা ‘ক্রোসিন’-এর পরিমাণ। ইরানি কেশরে যেখানে ৬.৮২% ক্রোসিন থাকে, সেখানে কাশ্মীরের জাফরানে ক্রোসিনের পরিমাণ থাকে ৮.৭২%। যা তাকে বানিয়েছে বিশ্বের সেরা কেশরগুলির মধ্যে অন্যতম। আবার এই উপাদানের জন্যই কাশ্মীরি কেশরের ঔষধিগুণও অন্য প্রকারগুলির থেকে অনেক বেশি। অথচ দাম পায় না কাশ্মীরি কেশর। একটি সূত্র বলছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও ১০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে বিক্রি হয়েছে কাশ্মীরি জাফরান। যেখানে তার দাম হওয়ার কথা প্রতি ১০ গ্রামে ২৫০০ টাকা।

Advertisement

আরও পড়ুন : করোনার নতুন প্রজাতি চিহ্নিত করে সংক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

আসলে সমস্যা হয় ইরানের কেশর নিয়ে। দামে সস্তা, স্বাদ-গন্ধ আর রঙেও কিছুটা কমজোরি এই কেশরকে কাশ্মীরি কেশরের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কাশ্মীরি কেশর নাম দিয়ে। ফলে উপযুক্ত দাম পায় না আসল কাশ্মীরি কেশর। সেই কেশর ফলানো চাষীরাও পান না পরিশ্রমের মূল্য। সরকারের দেওয়া ভৌগলিক পরিচিতি এই আসল কাশ্মীরী কেশরের মর্যাদা বাড়াবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আলাদা করে চেনাবে কাশ্মীরের জাফরানকে।

মন কি বাত অনুষ্ঠানে কাশ্মীরী জাফরানের ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়েও কথা বলেন মোদী। টেনে আনেন আকবরের রাজসভার নবরত্নের অন্যতম রত্ন আবুল ফজলের প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘আবুল ফজল বলেছিলেন, কাশ্মীর কোনও বিরক্ত আর মেজাজ গরম মানুষকেও খুশিতে নাচিয়ে তুলতে পারে। আসলে কাশ্মীরের জাফরান খেতের রূপের ইঙ্গিতই করেছিলেন ফজল। এই জাফরান কয়েকশো বছর ধরে জড়িয়ে আছে কাশ্মীরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে। ভৌগলিক পরিচিতি সেই ঐতিহ্যকেই পৃথিবীর সামনে আনবে।’’

সরকারি সূত্রে খবর, ডিসেম্বরেই দুবাইয়ের বাজারে আনা হয়েছে জি আই ট্যাগ পাওয়া কাশ্মীরি জাফরান। দ্রুত তা বিশ্বের অন্য দেশেও উপযুক্ত দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা হবে বলে রবিবার দাবি করেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, এর ফলে চাহিদা বাড়াবে। যদিও চাহিদা বাড়লে কাশ্মীরি জাফরানের ফলন বাড়ানোর ব্যাপারে কৃষকদের কোনও রকম সাহায্য করা যাবে কি না, তা নিয়ে কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন : বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রীকে ‘চাঁদের জমি’ উপহার দিলেন রাজস্থানের এক ব্যক্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন