Ladakh Protest

কেন ষষ্ঠ তফসিলের আওতাধীন করার দাবি তুলছে লাদাখ, কী সুবিধা মেলে এতে? আর কোন কোন দাবিতে চলছে আন্দোলন

লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক। তাঁর বক্তব্য, লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হোক।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:১০
Share:

উত্তপ্ত লাদাখ। (উপরে) বিক্ষোভকারীদের মিছিল। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে লাদাখ। বুধবার প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল লেহ-র স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)-র যুব শাখা। বিক্ষোভ ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে ওঠে। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত সেখানে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত প্রায় ৭০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্ফু জারি করা হয়েছে।

Advertisement

আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কেন্দ্রের। তার আগে বুধবার লেহ শহরে বিক্ষোভ দেখান একদল যুবক। অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীনই লেহ-তে বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। শুধু তা-ই নয়, পার্টি অফিসের সামনে থাকা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তার পরই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক। তাঁর বক্তব্য, লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হোক। দাবিপূরণে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫ দিনের জন্য অনশনে বসেন ওয়াংচুক-সহ লেহ অ্যাপেক্স বডি-র কয়েক জন সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে অনশন চললেও আন্দোলন যে ভাবে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে, তার বিরোধিতা করেছেন ওয়াংচুক।

কোন কোন দাবিতে আন্দোলন

Advertisement

পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা চাইছে লাদাখ। একদা সাবেক জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল লাদাখ। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে দু’টি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। একটি, জম্মু ও কাশ্মীর, অপরটি লাদাখ। রাজ্যের মর্যাদা ফিরে না-পেলেও বিধানসভা নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকার তৈরি হয়েছে। কিন্তু লাদাখ এখনও পুরোপুরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গিয়েছে।

সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও তুলেছে লাদাখ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

লাদাখের যুব সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করতে স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের দাবিও তোলা হয়েছে।

তা ছাড়া, লাদাখের জন্য লোকসভার দু’টি আসন বরাদ্দ করার দাবি তোলা হয়েছে। বর্তমানে লাদাখে একটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে দু’টি করার দাবি তোলা হয়েছে।

সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল কী

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৪-এর ষষ্ঠ তফসিল অনুসারে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় স্বশাসিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। সে ক্ষেত্রে ওই স্বশাসিত সংস্থা কয়েকটি আইনি, প্রশাসনিক এবং বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা পেয়ে থাকে। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের চার রাজ্য অসম, মেঘালয়, মিজ়োরাম এবং ত্রিপুরার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ষষ্ঠ তফসিল কার্যকর রয়েছে।

প্রসঙ্গত, দার্জিলিংকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে প্রায় তিন দশক আন্দোলন চালিয়েছিলেন জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিং। ২০০৫ সালে ঘিসিঙের সঙ্গে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিতে স্বশাসিত দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। যদিও সেই চুক্তি সংসদে পাশ হলেও কার্যকর হয়নি। পরে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠিত হলে আধা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হলেও দার্জিলিংকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করার দাবি মানা হয়নি।

লাদাখের আন্দোলনের নেতৃত্বে বৌদ্ধপ্রধান লেহ-র বাসিন্দারা থাকলেও তাকে সমর্থন করেছে মুসলিম প্রধান কার্গিলের কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ)। বৃহস্পতিবার তাদের ডাকে বন্‌ধ চলছে লাদাখে। সংগঠনটির নেতা সাজ্জাদ কার্গিলি ওয়াংচুকের অনশনকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “এটা লাদাখের অস্তিত্বরক্ষার লড়াই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement