সোনম ওয়াংচুককে রাখা হল জোধপুরের জেলে। — ফাইল চিত্র।
লাদাখ বা দিল্লিতে নয়, ধৃত সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল জোধপুরে। সেখানকার কারাগারেই বন্দি থাকবেন তিনি। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে তাঁকে রাখা হয়েছে। তিনি ২৪ ঘণ্টা থাকবেন সিসি ক্যামেরার নজরে। অন্য কোনও বন্দিকে তাঁর কুঠুরিতে রাখা হয়নি।
ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পরিচিত জোধপুরের এই কারাগারটি। বহু নামকরা বন্দির ঠিকানা হয় এই কারাগার। সেই তালিকায় রয়েছেন সলমন খান, স্বঘোষিত ধর্মগুরু আশারাম বাপুর-সহ আরও অনেকে। অনেক জঙ্গি সংগঠনের মাথারা এই জেলেই থাকেন। তাই অন্য কারাগারগুলির তুলনায় জোধপুরের এই জেলের নিরাপত্তা অনেক বেশি নিশ্ছিদ্র। বর্তমানে এই কারাগারে বন্দি সংখ্যা ১,৪০০।
তবে ওয়াংচুককে কেন জোধপুরের কারাগারে রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি কর্তারা। যদিও ধারণা, লাদাখে তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভের আঁচ যাতে কারাগারে এসে না পড়ে, সেই কারণেই জোধপুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ওয়াংচুককে লাদাখ থেকে বিশেষ বিমানে জোধপুরে নিয়ে আসা হয়। তবে এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলা পুরোপুরি এড়ানো যায়নি।
শনিবার জোধপুরের ওই জেলের বাইরে বিজয়পাল নামে এক ব্যক্তি বিক্ষোভ দেখান। তাঁর দাবি, কেন ওয়াংচুককে গ্রেফতার করা হল, তার জবাব দিতে হবে কেন্দ্রকে। শুধু তা-ই নয়, ‘আমরণ অনশনে’র হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তবে তৎক্ষণাৎ ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। উল্লেখ্য, জোধপুরের এই জেলের সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় হামলা হয়েছিল এই কারাগারে। সেই হামলায় জেলের মধ্যেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়, যা নিয়ে সেই সময় খুব হইচই হয়।
লাদাখকে রাজ্যের স্বীকৃতির দাবিতে দীর্ঘ দিন লড়াই করছেন ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক তথা সমাজকর্মী ওয়াংচুক। বার বার অনশনও করেছেন তিনি। তবে গত বুধবার রাজ্যের স্বীকৃতির দাবিতে লেহতে বিক্ষোভ দেখান বেশ কয়েক জন। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় পরিণত হয়। সেই ঘটনার পর শুক্রবার ওয়াংচুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় আমির খানের ‘র্যাঞ্চো’ চরিত্রটি বানানো হয়েছিল তাঁরই আদলে। অনেকের তাঁকে বাস্তবের ‘র্যাঞ্চো’ বলেও ডাকেন।
কেন ওয়াংচুককে গ্রেফতার?
বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট বা এফসিআরএ) লঙ্ঘনের অভিযোগে ওয়াংচুককে গ্রেফতার করা হয়। সংস্থা ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল আগেই।
ওয়াংচুকের সংস্থা এসইসিএমওএল এবং ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ’ (এইচআইএএল) এবং ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে চলতি মাসে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পিটিআই-এর প্রতিবেদককে বৃহস্পতিবার সোনম জানিয়েছিলেন, প্রায় ১০ দিন আগে সিবিআই-এর তদন্তকারী দল সরকারি নির্দেশনামা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।