বিহারে লালুই লক্ষ্য বিজেপির

লালু প্রসাদকেই প্রধান প্রতিপক্ষ মেনে বিহারের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নরেন্দ্র মোদীর ঝড়কে মোকাবিলা করতে তৈরি লালু প্রসাদ ও নীতীশ কুমারের যুগলবন্দির কাছে বিহারের উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। তাতে নড়েচড়ে বসেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফল পর্যালোচনা করে বিজেপি নেতারা দেখেছেন, উপনির্বাচনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে ত্রুটির মতো অনেক সমস্যা রয়েছে। আর বিহারের রাজনীতিতে যাঁর গুরুত্ব ফের বাড়তে শুরু করেছে, তিনি লালু প্রসাদ।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৯
Share:

লালু প্রসাদকেই প্রধান প্রতিপক্ষ মেনে বিহারের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর ঝড়কে মোকাবিলা করতে তৈরি লালু প্রসাদ ও নীতীশ কুমারের যুগলবন্দির কাছে বিহারের উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। তাতে নড়েচড়ে বসেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফল পর্যালোচনা করে বিজেপি নেতারা দেখেছেন, উপনির্বাচনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে ত্রুটির মতো অনেক সমস্যা রয়েছে। আর বিহারের রাজনীতিতে যাঁর গুরুত্ব ফের বাড়তে শুরু করেছে, তিনি লালু প্রসাদ। কংগ্রেসের সঙ্গে লালু-নীতীশের নয়া সমঝোতা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব আগেও তেমন ছিল না, আজও নেই। নীতীশের ঝুলিতে দুটি আসন এসেছে মূলত লালুরই দৌলতে। ফলে লালুকে নিশানা করেই পরের বছরে বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন অমিত শাহ।

মুম্বইয়ে চিকিৎসাধীন লালু এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি। কিন্তু দেওয়াল লিখন পড়ে অমিত শাহ কৌশল স্থির করতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর শিবিরের মতে, উপনির্বাচনে বিজেপির শক্তি ক্ষয় হয়েছে, এমনটি নয়। বিজেপিকে ঠেকাতে বিরোধীরা একজোট হলেও বিজেপির ভোটে তেমন থাবা বসাতে পারেনি। কিন্তু ক্রমশই বিরোধী জোটের নেতা হয়ে উঠতে চাইছেন লালু প্রসাদ। বিজেপি জোট ছাড়ার পর নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ভিত যে ভাবে ভঙ্গুর হওয়া শুরু হয়েছে, সেই ধারা এখনও অব্যাহত। দুর্বল নীতীশের পক্ষেও এখন লালুর আধিপত্য মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও গতি নেই। সরকারি কাজেও এখন নাক গলাতে শুরু করেছেন লালুর অনুগামীরা। এমনকী বিহারের মন্ত্রিসভাতেও লালু সামিল হয়ে ছড়ি ঘোরাতে চাইছেন। এই প্রক্রিয়ায় আগামী দিনে নীতীশ আরও দুর্বল হবেন, শক্তিশালী হবেন লালু প্রসাদ। জিতান রাম মাঁজি মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে বকলমে লালু নিজের রাজই ফিরিয়ে আনতে চান।

Advertisement

অমিতের কৌশল কী? বিজেপি সূত্রে খবর, এখন ঠিক এরই অপেক্ষায় আছে তারা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী ও বিহারের নেতা রাধামোহন সিংহ বলেন, “আমরা তো মনেপ্রাণে চাইছি, লালু প্রসাদ সরকারে সামিল হোন। এক বার তিনি সরকারে সামিল হলে বিজেপির হাতে নতুন হাতিয়ার আসবে। বিহারের মানুষকে ফের লালু জমানার অপশাসনের কথা স্মরণ করানো যাবে।”

লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসন বেছে নেওয়ার পিছনে নরেন্দ্র মোদীর কৌশলই ছিল, যাতে তাঁর প্রভাব পাশের রাজ্য বিহারেও পড়ে। সেই কৌশলে ভর করে ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ২২টি আসন পেয়েছে। শরিকদের নিয়ে সেটি ছাপিয়ে গিয়েছে ত্রিশের কোঠা। তার আগের নির্বাচনে ২০০৯ সালে যেখানে নীতীশের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ১২। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লালু-নীতীশের যুগলবন্দি ভেঙে দেওয়াই অমিত শাহের প্রথম কৌশল।

দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, এই দুই নেতা মন থেকে নয়, হাত মিলিয়েছেন রাজনৈতিক চাপে। মুম্বইয়ের হাসপাতালে নীতীশ কুমার লালুকে দেখতে যতই ছুটে যান, দুই দলের মধ্যে খারাপ সম্পর্কের চোরাস্রোত বিলক্ষণ রয়েছে। এক বার লালুর দাপট বাড়লেই বিজেপি এক দিকে মানুষকে লালু জমানা স্মরণ করাবে। অন্য দিকে দুই নেতার মধ্যে বিভাজনকেও আরও উস্কে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন