সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর মামলার শুনানি। — ফাইল চিত্র।
পর পর দু’দিন এসআইআর সংক্রান্ত মামলা শুনল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ। তাঁর সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। বৃহস্পতিবার ফের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই প্রক্রিয়াটি ভোটার তালিকার সাধারণ আপডেট নয়। এটি বিশেষ (নিবিড়) সংশোধন প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে এই সংশোধনের প্রক্রিয়াটি ন্যায়সঙ্গত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি জানান, তাঁরা কমিশনের কাজের নীতিগুলিকে স্বাধীন ভাবে ব্যাখ্যা করতে চান। বৃহস্পতিবারের শুনানি পর্বে বিএলও-দের প্রসঙ্গে ফের সওয়াল করেন সিব্বল। তাঁর সওয়াল, কারও মানসিক অবস্থা খারাপ কি না, তা বিএলও কী ভাবে স্থির করবেন? একইসঙ্গে স্কুলশিক্ষকদের বিএলও হিসাবে নিযুক্ত করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আইনজীবী সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, যদিও ছবি যাচাই করা হত, বা এমন কিছু করা হত— তা হলে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু এখন যা করা হচ্ছে, তাতে তো কেউ নাগরিক কি না, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে আদালতে সওয়াল করেন তিনি। আগামী মঙ্গলবার ফের এই মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত জানান, কমিশনের কাজের নীতিগুলি সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন ভাবে ব্যাখ্যা করতে চায়। আগামী মঙ্গলবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।
প্রধান বিচারপতি কান্তের মন্তব্য, এটি ভোটার তালিকার কোনও রুটিন আপডেট চলছে না। তবে যদি কোনও বিশেষ সংশোধন করা হয়, তবে প্রক্রিয়াটি ন্যায়সঙ্গত হওয়া প্রয়োজন। যেটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, কমিশন সেটিই করবে।
আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, যদিও ছবি যাচাই করা হত, বা এমন কিছু করা হত— তা হলে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু এখন যা করা হচ্ছে, তাতে তো কেউ নাগরিক কি না, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সিব্বলের সওয়াল, বিদেশি নাগরিক আইন (ফরেনার্স অ্যাক্ট) অনুসারে প্রমাণ করার দায়িত্ব থাকে বিদেশিদের উপর। তা হলে কোন ক্ষমতাবলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। যদি কারও বাবার নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তা হলে এই দায়িত্ব কেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর পড়বে?
এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিএলও হিসাবে স্কুলশিক্ষকদের নিয়োগ করা নিয়েও প্রশ্ন সিব্বলের। তাঁর বক্তব্য, (কারও নাগরিকত্ব নির্ধারণ করার জন্য) বিএলও হিসাবে এই অধিকার এক জন স্কুলশিক্ষককে দেওয়া যায় না। তাই এই প্রক্রিয়াটিই অযৌক্তিক।
বৃহস্পতিবারের শুনানি পর্বে বিএলও-দের পরিস্থিতি নিয়ে ফের সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, একজন বিএলও কী ভাবে বিবেচনা করবেন কেউ মানসিক ভাবে কোন অবস্থায় রয়েছেন। এটি কি বিএলও নিজে থেকে স্থির করতে পারেন? এটি বিবেচনা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
বুধবারের পরে বৃহস্পতিবার ফের এসআইআর মামলা শুনানির জন্য উঠল প্রধান বিচারপতির এজলাসে। দুপুর ৩টের কিছু আগে শুরু হয় শুনানি।
প্রধান বিচারপতি কান্ত বুধবার জানান, আধার কার্ড হল এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, “ধরুন কেউ প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা। কেউ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। আপনারা রেশনের জন্য আধার দিচ্ছেন। এটি আমাদের সাংবিধানিক নীতির অংশ। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁকে আধার নথি দেওয়া হয়েছে বলে কি তাঁকে এখন ভোটার হিসেবেও গণ্য করা উচিত?”
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী জানান, নথিপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা যাচাই করার সাংবিধানিক এক্তিয়ার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তিনি আরও বলেন, “আধার কার্ড কখনোই নাগরিকত্বকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রমাণ করতে পারে না।
শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে এসআইআর প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও। কী ভাবে দু’মাসের মধ্যে এসআইআর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। যাঁরা নিরক্ষর, লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা কী করবেন, সওয়াল করেন সিব্বল। কী ভাবে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়, তা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা কী ভাবে বুঝবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আইনজীবীর।