লেখি-কে দেখি না! তবু ভোটভাগে জয় কার 

দিল্লি রাজনীতিতে শুরু থেকেই কংগ্রেসের ডাকাবুকো নেতা হিসাবে পরিচিত মাকেন। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোটের পক্ষে  প্রকাশ্যে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবে একাই লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০৩:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

গোটা দেশ লড়ছে দিল্লি দখলে। আর তিনি লড়ছেন দিল্লির প্রাণকেন্দ্র নিউ দিল্লি কেন্দ্র পুনরুদ্ধারে। দু’বার পরপর ওই আসনে জিতলেও, গতবার বিজেপির মীনাক্ষী লেখির কাছে হেরে যান তিনি। কেন্দ্র পুনরুদ্ধার তাই প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াই কংগ্রেসের অজয় মাকেনের কাছে।

Advertisement

দিল্লি রাজনীতিতে শুরু থেকেই কংগ্রেসের ডাকাবুকো নেতা হিসাবে পরিচিত মাকেন। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোটের পক্ষে প্রকাশ্যে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবে একাই লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। তাতে যে আসন এবং জেতার মার্জিন কমবে, তা-ও বলেছেন অজয়।

প্রায় ১৬ লক্ষ ভোটারের ওই কেন্দ্রের বড় অংশ (লোদি রোড, অ্যান্ড্রুজ গঞ্জ, মোতি বাগ, গোল মার্কেট, সরোজিনী নগর) জুড়ে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বাসস্থান। বেতন কমিশনের সুবাদে সরকারি কর্মীদের ভোট তাঁর ঝুলিতে যাবে—ওই আশায় রয়েছেন মীনাক্ষী। কিন্তু গ্রেটার কৈলাস বা চিত্তরঞ্জন পার্কের মতো উচ্চবিত্ত এলাকা গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের মুখ দেখেনি বলেই ক্ষোভ স্থানীয়দের। চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা শঙ্কর রায় ২ নম্বর বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি ছিল, বাজারগুলি ঢেলে সাজানো হবে। কিছুই হয়নি। পার্কিং সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি ছিল, তা-ও হয়নি। উল্টে ঘিঞ্জি এলাকায় শপিং মল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কোনও ভাবে তা রোখা গিয়েছে।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ক্ষুব্ধ গোল মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা। ওই এলাকার ‘হেরিটেজ’ চেহারাকে সামনে রেখে আধুনিকীকরণের পরিকল্পনাই সার। ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে। গোল মার্কেট এলাকায় ধাবার মালিক বিজয় প্রকাশ বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট যা চওড়া হয়েছে, সাফাই হয়েছে তা কেবল মাত্র রাজধানী এলাকা বলেই। না হলে বাকি দিল্লি থেকে আলাদা করা যেত না।’’ নয়াদিল্লি স্টেশন সংলগ্ন পাহাড়গঞ্জ, দরিয়াগঞ্জ এলাকায় ঘিঞ্জি গলি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খোলা নর্দমা। দিল্লি বলে চেনা মুশকিল। প্রতি মাসে নর্দমা সাফাই করতে গিয়ে সাফাই কর্মীর মৃত্যুও এখন বিস্ময়কর ভাবে ‘গা-সওয়া’!

উপরন্তু করোল বাগ, পটেল নগর, রাজেন্দ্র নগর বা মালব্য নগরে নোটবাতিল এবং জিএসটি ঘিরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ রয়েছে। যা মেটাতে মাঠে নামতে হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। করোলবাগে দীর্ঘ দু’দশক ধরে সোনার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমবঙ্গের দীপক রায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই সরকারের আমলে যা ধাক্কা খেয়েছি তা ভোলার নয়। উপরন্তু বিজেপির হাতে থাকা পুরসভা নিত্যদিন ‘ফাইন’-এর কাগজ ধরিয়ে যাচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীরা তিতিবিরক্ত।’’ যে ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে চান মাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষার খরচ বাড়ছে। অথচ চাকরি নেই। প্রচারে বালাকোট আছে। কিন্তু চাকরির দিশা নেই মোদীর কাছে। তাই লোকে তৈরি হচ্ছে বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।’’

মীনাক্ষী অবশ্য নিজের কাজে বেজায় সন্তুষ্ট। বললেন, ‘‘আগামী দিনে পরিবেশ দূষণ রোধে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেব। রাজধানীর পার্কগুলিকে আর সুন্দর ভাবে সাজিয়ে ‘ওপেন জিম’ বানানো হবে। পাশাপাশি স্থানীয় যুবকেরা যাতে রোজগার পান, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।’’ লোকসভা কেন্দ্রে আপের প্রচার ‘মীনাক্ষি লেখি কভি না দেখি’ মানতে চাননি সাংসদ। তাঁর দাবি, যথাসম্ভব মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।

আর আপ প্রার্থী ব্রিজেশ গয়াল? নিজের দলেই কিছুটা অচেনা মুখ হলেও রাজনৈতিক শিবিরের মতে, গয়ালের সুবিধে হল, নয়াদিল্লির ১০টি বিধানসভার মধ্যে ১০টিই আপের দখলে রয়েছে। চার বছর আগের নিরঙ্কুশ সমর্থন না থাকলেও, আপের ভোট ব্যাঙ্ক মোটামুটি অক্ষত রয়েছে বলেই দাবি দলের।

কিন্তু জোট হলে যেখানে অনায়াসে বিজেপিকে হারানো

সম্ভব ছিল, সেখানে শাসক-বিরোধী ভোট ভাগাভাগির ফায়দা পাবে বিজেপি—ওই আশঙ্কা তো বাড়ছেই। মাকেনের অবশ্য দাবি, ‘‘দিল্লির মানুষ জানেন, এটা লোকসভার নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত হচ্ছে কংগ্রেস ও বিজেপি— দুই জাতীয় দলের। তাই ভোট ভাগাভাগি হলে দুই দলের মধ্যে হবে।’’

তাই কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন