এ ভাবে মিনিবাসের ছাদে বসেই পথসভা করেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। ছবি: এএফপি।
রবিবার ষষ্ঠ দফায় দিল্লির সাত আসনে নির্বাচন। তার আগে ঘরে ফিরলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আর ঘরের মেয়েকে মহাসমারোহে স্বাগত জানালেন দিল্লিবাসীও। সেখান থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তোপ দাগলেন রাজীব তনয়া।
নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, লোকসভা ভোটের বাকি দু’দফা ‘রাজীব গাঁধীর মানসম্মান’কে কেন্দ্র করেই লড়া হোক।এ দিন নাম না করে মোদীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন প্রিয়ঙ্কা। ‘‘সাহস থাকলে নোটবন্দি, জিএসটি এবং নারী নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন লড়ে দেখান,’’— বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “দিল্লির এই মেয়ে আপনাকে খোলা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে, সাহস থাকলে শেষ দুই দফায় নোটবন্দি, জিএসটি, নারী নিরাপত্তা নিয়ে লড়ে দেখান। ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু একটাও পূরণ করতে পারেননি। দেশের যুবসমাজকে ঠকিয়েছেন আপনি। তাই যে প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, সেগুলি নিয়ে নির্বাচন লড়ে দেখান।”
আরও পড়ুন: ‘আমি চাই, উনি প্রধানমন্ত্রী হোন, উনিও চান আমি হই মুখ্যমন্ত্রী’
নির্বাচনী প্রচারে বার বার গাঁধী পরিবারকে বিরুদ্ধে নিশানা করেছে বিজেপি। তা নিয়েও এ দিন কটাক্ষ করেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর কথায়, “হোমওয়ার্ক না করে স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের মতো অবস্থা এদের। মাস্টারমশাই জিজ্ঞাসা করলে বলে, কী করব, নেহরুজি আমার খাতা লুকিয়ে রেখেছেন। কী করব, ইন্দিরা গাঁধী আমার হোমওয়ার্ক-সুদ্ধ খাতার পাতা ছিঁড়ে নৌকো বানিয়ে জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন।”
এত দিন মা ও দাদার হয়ে প্রচারে অংশ নিলেও, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর। সেই থেকে উত্তরপ্রদেশ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তবে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দলের প্রার্থী শীলা দীক্ষিত এবং দক্ষিণ দিল্লির কংগ্রেস প্রার্থী বক্সার বিজেন্দ্র সিংহের হয়ে প্রচারে এ দিন দিল্লিতে পথসভা করেন তিনি। একটি মিনিবাসের ছাদে বসে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীলামপুর থেকে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তাঁকে একঝলক দেখতে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঢাকঢোল নিয়েই প্রিয়ঙ্কার পথসভায় যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। ‘দেশ মে আঁধি, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী’, স্লোগানও শোনা যায় তাঁদের মুখে।
তবে থেমে থাকেননি সাধারণ মানুষও। ধীর গতিতে প্রিয়ঙ্কার কনভয় যত এগোতে শুরু করে, রাস্তার দু’পাশের বাড়ি থেকে ততই উড়ে আসতে থাকে গোলাপের পাপড়ি। প্রিয়ঙ্কাকে দেখতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন সীলামপুরের বাসিন্দা জুবের আহমেদ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আবর্জনাই এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর একবারও এখানে আসেননি বিজেপির মনোজ তিওয়ারি। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল তো সরকারই চালাতে পারেন না!”
আরও পড়ুন: এক দিনের ‘পুলিশকর্তা’ হয়ে বাবাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে নির্দেশ মেয়ের
তবে প্রিয়ঙ্কার এই পথসভা নিয়েই ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “খামোকা সময় নষ্ট করছেন প্রিয়ঙ্কা। রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশে দলের হয়ে প্রচারে যাননি কেন উনি? উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির হয়ে প্রচার করছেন। এখানে আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে। যেখানে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই, ভাইবোনের কেউই ওই সব জায়গার ধারও মাড়ান না।”
নির্বাচনের আগে দিল্লি, হরিয়ানা ও পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়ার কথা ছিল। দিল্লির সাতটি আসনের মধ্যে চারটি আপকে দিতে রাজি হলেও, শেষ মেশ জোট থেকে পিছিয়ে আসে কংগ্রেস। অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং তাঁর দলের জন্যই দিল্লি হাতছাড়া হয়েছিল কংগ্রেসের, তাই শীলা দীক্ষিতের মতো আরও অনেকেরই তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে সায় ছিল না বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগামী বছর দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। সর্বশক্তিতে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় কংগ্রেস। তার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতেই এমন সিদ্ধান্ত।