লালবাজারে পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমারের সঙ্গে রিচা।
লালবাজারে অপেক্ষায় রয়েছেন খোদ পুলিশ কমিশনার। নিজের অফিসে জরুরি কাজ মিটিয়েই রক্ষীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ডেপুটি কমিশনার (এসইডি)। মাঝে বেনিয়াপুকুর থানায় ঢুঁ মেরে ফের গাড়ি ছুটল লালবাজারের উদ্দেশে। সিপি-র সঙ্গে সাক্ষাতের পর গড়িয়াহাট থানার অতিরিক্ত ওসি রাজেশ কুমার সিংহকে ডিসি বললেন, “আপনি আজ ডিউটি থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবেন।”
ঘাড়ে ক’টা মাথা, যে এই নির্দেশ অবজ্ঞা করবেন রাজেশবাবু! এমনিতেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সময় মতো বাড়ি পৌঁছতে পারেন না। দেরি হওয়াটাই দস্তুর। ডিসি-র নির্দেশে যেন শাপে বর হল। যাঁর কাছ থেকে এই নির্দেশ এল, সেই রিচা সিংহ ১২ ঘণ্টার জন্য ডিসি (এসইডি)-র দায়িত্ব পেয়েছেন। এ বছর আইএসসি পরীক্ষায় রিচা ৯৯.২৫ শতাংশ পেয়ে গোটা দেশের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন। রিচার আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি গড়িয়াহাট থানার অতিরিক্ত ওসি রাজেশ সিংহের মেয়ে। রিচার সাফল্যের খবর জানার পর পুলিশ কমিশনারই তাঁকে এক দিনের ডিসি হওয়ার প্রস্তাব দেন।
সাধারণত সকালবেলায় বই-খাতা নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই অভ্যস্ত রিচা। কিন্তু বুধবারের শুরুটা হল একে বারে অন্য মোড়কে। এ দিন বইখাতা থেকে অনেক দূরে ছিলেন রানিকুঠির বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন স্কুলের এই মেধাবী ছাত্রী। বাবা পুলিশ অফিসার, কাজে ব্যস্ত থাকেন— এ নিয়ে নানা অনুযোগ ছিল তাঁর। তাই ডিসি হওয়ার সুযোগ পেয়ে, বাবাকে এ দিন তাড়াতাড়়ি ফিরতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন, ভোটে পুলিশের ‘সুনাম’ রাখতে চান কমিশনার
রাকেশবাবুও এত দিন ডিসি (এসইডি) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ শুনতেই অভ্যস্ত ছিলেন। এ দিনটা যেন ছিল একেবারে অন্য রকম। সারাটা দিন তিনি মেয়ের কথা মতোই চললেন। মেয়ের নিরাপত্তারক্ষী হয়ে দায়িত্বও পালন করলেন রাজেশ। তাঁর কথায়: “এটা এক অন্য অনুভূতি। মেয়ে ভাল ফল করায় পুলিশ পরিবার যে ভাবে আপন করে নিয়েছে, তা ভাবা যায় না।”
১২ ঘণ্টার জন্য ডিসি (ইএসডি)-এর চেয়ারে বসে দায়িত্ব সামলালেন রিচা সিংহ।
রিচাও ঠিক বাবার মতোই আবেগতাড়িত ছিল এ দিন। তাঁর ইচ্ছে, সমাজতত্ত্ব অথবা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করার। রিচা এ দিন উপনগরপালের দায়িত্ব সামলে বললেন, “আমি সমাজতত্ত্ব বা ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করতে চাই। আইএএস হওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে।”
আরও পড়ুন, মাটির নীচে পাইপের ফাটল খুঁজতে জিআইএস মানচিত্র
আর যাঁর চেয়ারে সারাটা দিন বসলেন রিচা সেই ডিসি (এসইডি) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন: “রিচার মতো মেধাবী ছাত্রীদের আমরা কুর্নিশ জানাই। পুলিশ পরিবারে ওঁদের মতো মেধাবীদের অনেক প্রয়োজন।”
ছবি: কলকাতা পুলিশের টুইটার পেজ থেকে গৃহীত।
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy