E-Paper

জলের অবাধ কালোবাজারি, দায় মুছতে ভেন্ডারের খোঁজ

শুক্রবার বিধাননগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকার দর্শকদের উদ্দেশে আবেদন রাখেন, জলের বোতল নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ না করার। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্টেডিয়ামে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকবে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৮
২০ টাকার জলের বোতল ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

২০ টাকার জলের বোতল ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। ছবি: সংগৃহীত।

এ রাজ্যে জলকর বসাতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বার কলকাতা শহরেজলকর বসাতে গিয়ে তাঁর বিরাগভাজন হয়েছিলেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেই মমতার সরকারের আমলেই লিয়োনেল মেসিকে নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার অনুষ্ঠানে পানীয় জল বিক্রি নিয়ে চরমকালোবাজারি হল শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। অভিযোগ, যা ঘটল পুলিশ-প্রশাসনের চোখেরসামনেই।

শুক্রবার বিধাননগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকার দর্শকদের উদ্দেশে আবেদন রাখেন, জলের বোতল নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ না করার। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্টেডিয়ামে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকবে। সেই মতো বিপুল দামে টিকিট কাটা দর্শকেরা মেসির দর্শনে মাঠে গিয়ে ২০ টাকার জলের বোতল ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হন। বিমানবন্দরে বিক্রি হওয়া বোতলের পানীয় জলের দামের থেকেও যা বেশি। মাঠে প্রভাবশালীদের ভিড়ে-বন্দি মেসিকে দেখতে না পেয়ে আট থেকে দশ গুণ দামে কেনা জলের বোতল মাঠে ছুড়তে থাকেন ক্ষুব্ধ দর্শকেরা।

হতাশ হয়ে শনিবার মাঠ থেকে বেরিয়ে বহু দর্শক পানীয় জলের এই কালোবাজারি নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। সেই সব ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োগুলির কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে, বিক্রেতা জলের বোতলের দাম হাঁকছেন২০০ টাকা। কোনও ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পানীয় জলের বোতলের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে রীতিমতো গালিগালাজ করছেন দর্শকেরা। ক্ষুব্ধ দর্শকেরা জানাচ্ছেন, মেসি-দর্শন নির্বিঘ্নে সারা গেলে পানীয় জলের এই কালোবাজারি নিয়ে হয়তো ততটা হইচই হত না।

সামগ্রিক ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছে বিধাননগর পুলিশও। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিফল হয়ে ফেরা হাওড়ার বাসিন্দা এক মেসি-ভক্তের কথায়, ‘‘সাতসকালে স্টেডিয়ামে পৌঁছেছি। ভিতরে ঢুকে দেখি স্ন্যাক্স,খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। ১৫০-২০০ টাকা জলের বোতলের দাম। যে টাকায় টিকিট কেটেছি,তার তুলনায় অনেক কম বলে জলের দাম তখন গায়ে লাগেনি। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এত খরচ, তার সবটাই তো জলে গেল।’’

২০১৭ সালে অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময়ে নিয়ম হয়েছিল যে, যুবভারতীতে জলের বোতল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তার পর থেকে স্টেডিয়ামে বিভিন্ন ক্লাবের তরফে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে জলের পাউচের জোগান রাখা হয় দর্শকদের জন্য। অভিযোগ, পুলিশের তরফে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থার আশ্বাস পেয়ে তাই বহু মানুষ বিভ্রান্ত হন এই ভেবে যে, অন্যান্য খেলার মতো শনিবারও বিনামূল্যে কিংবা কম খরচে পানীয় জল পাওয়া যাবে। কিন্তু স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকে পানীয় জলের বোতলের দশ গুণ দাম শুনে তাঁরা অবাক হয়ে যান। যে কারণে অনেকে এমন অভিযোগ করছেন যে, পুলিশের কথায় ভরসাকরে হাজার হাজার দর্শক শনিবার পানীয় জলের কালোবাজারির সম্মুখীন হলেন।

বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার শ্রী মুকেশ রবিবার যুবভারতীতে সংবাদমাধ্যমকে জানান, জলের ভেন্ডারদের খোঁজ চলছে।এক পদস্থ পুলিশকর্তা জানান, স্টেডিয়ামের ভিতরে ওই সব স্টলের অনুমতি পুলিশ কিংবা ক্রীড়া দফতর দেয়নি। কী করে তারাওখানে পৌঁছল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, উদ্যোক্তারা কোনও সংস্থাকে জলবিক্রির বরাত দিয়েছিল কিনা, তা দেখা হবে।

খবর এমনও যে, নামী সংস্থা থেকে খুচরো বিক্রেতা, স্টেডিয়ামে শনিবার খাবার কিংবা জল বিক্রির বরাত পেয়েছিলেন অনেকেই।তার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়েছিল তাঁদের। মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বিনিয়োগের টাকা উসুল করতে গিয়ে পানীয় জল-সহ খাবারের দাম আকাশছোঁয়া করে দেওয়া হয়।

সেই বিনিয়োগের টাকা কে বা কারা কোথায় জমা দিয়েছিলেন, তা খুঁজে বার করতে মরিয়া বিধাননগর পুলিশ। কারণ পানীয় জল স্টেডিয়ামে পর্যাপ্ত থাকবে, সেই প্রতিশ্রুতি প্রথম দিয়েছিল তারাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

black market yuva bharati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy