মহরাষ্ট্র সরকারের মহিলা ভাতা ঘিরে বিতর্ক। — ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের ‘লাডকী বহীণ’ প্রকল্পে ২৬ লক্ষ উপভোক্তাই অযোগ্য! সোমবার এমনটাই জানিয়ে দিল মহারাষ্ট্র সরকার। এই প্রকল্পে বেনিয়ম নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। মহিলাদের জন্য এই ভাতা চালু করা হলেও অনেক পুরুষ এই প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই বিতর্কের আবহেই সোমবার মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী অদিতি তটকরে জানালেন, সে রাজ্যে ‘লাডকী বহীণ’ প্রকল্পে ২৬ লক্ষ অযোগ্য উপভোক্তা রয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অদিতি জানান, এই অযোগ্য উপভোক্তাদের তথ্য যাচাই করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। যাঁদের অযোগ্য বলে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা আপাতত ভাতা পাবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী। তবে যোগ্যেরা যেমন সুবিধা পাচ্ছিলেন, তেমনই পেতে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন অদিতি।
এক সমাজমাধ্যম পোস্টে মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের মাপকাঠি অনুসারে প্রাথমিক ভাবে এই ২৬ লক্ষকে যোগ্য উপভোক্তা বলে মনে হচ্ছে না। মহারাষ্ট্রের সব জেলাতেই তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন মন্ত্রী। বস্তুত, গত বছর মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ধাঁচে একটি মহিলা-ভাতা প্রকল্প চালু করেছিল একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।
তবে গত মাসেই এই প্রকল্পে বিস্তর গরমিলের অভিযোগ উঠে আসে। নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের জুলাই মাসের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০ মাসে নারীদের পাশাপাশি এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ১৪,২৯৮ জন পুরুষ! এঁরা সকলেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় কারচুপি করে নিজেদের মহিলা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে এই অতিরিক্ত ১৪,২৯৮ জনকে টাকা দিতে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্র সরকারের পকেট থেকে খসেছে ২১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা!
ওই রিপোর্টে আরও জানা যায়, বহু মহিলা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেছেন। প্রকল্পে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, প্রতিটি পরিবারে সর্বাধিক দু’জন মহিলা এই সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু ৭.৯৭ লক্ষেরও বেশি মহিলা একই পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই সরকারি কোষাগারের ১,১৯৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে! এ ছাড়া, প্রকল্পের সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা, অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ২.৮৭ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে ৪৩১.৭০ কোটি টাকা। এমনকি, চার চাকার গাড়ি রয়েছে, এমন পরিবারেরও ১.৬২ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন! ফলে সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রথম বছরেই আনুমানিক ১,৬৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারের।