(বাঁ দিকে) নিকি ভাটি এবং বিপিন ভাটি (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।
নয়ডার বধূহত্যা কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কী থেকে অশান্তির সূত্রপাত, তা-ও উঠে এসেছে তদন্তে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে খুন করা হয় ২৮ বছর বয়সি নিকি ভাটিকে। তার ঠিক আগেই বিউটি পার্লার খোলাকে কেন্দ্র করে স্বামী বিপিন ভাটির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল নিকির।
পুলিশ সূত্রে খবর, বোন কাঞ্চনের সঙ্গে মিলে আগেও একটি পার্লার চালাতেন নিকি। মাঝে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি সেটিকেই আবার চালু করার চেষ্টা করছিলেন দুই বোন। ‘মেকওভার বাই কাঞ্চন’ নামে সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্টও ছিল তাঁদের। ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে তাঁরা পার্লারের প্রচারও করতেন। বিভিন্ন ছোট ভিডিয়ো (রিল) শেয়ার করতেন তাঁরা। এ ছাড়া দুই বোন নিজস্ব সমাজমাধ্যম হ্যান্ডল থেকেও পার্লারের প্রচার করতেন। নিকির ব্যক্তিগত হ্যান্ডলে এক হাজারেরও বেশি ফলোয়ার। কিন্তু নতুন করে পার্লার চালু করা নিয়ে আপত্তি ছিল বিপিনের। স্ত্রীর ‘রিল’ বানানোও পছন্দ করতেন না তিনি।
বর্তমানে এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে নয়ডার কাসনা থানার পুলিশ। ওই থানার পুলিশ আধিকারিক (এসএইচও) ধর্মেন্দ্র শুক্ল জানান, বিপিনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নিকি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। স্বামীকে তিনি এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেউ-ই তাঁকে পার্লার খোলা থেকে আটকাতে পারবেন না। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, “(গত বৃহস্পতিবার) দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ, বিপিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন নিকি। স্বামীকে তিনি জানান, বোনের সঙ্গে মিলে পার্লারটি আবার চালু করতে চান তিনি। কিন্তু বিপিন রাজি না-হলে, নিকির সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়।” পুলিশ জানিয়েছে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিকিকে এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন পার্লার খোলা তো যাবেই না, সমাজমাধ্যমে ‘রিল’ও শেয়ার করা চলবে না। ঘটনাচক্রে, গত বৃহস্পতিবার এই তর্কাতর্কির ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন নিকি। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে খুন করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের পরে গত শুক্রবারই কাসনা থানায় ভাটি পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে নিহতের স্বামী বিপিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় জেআইএমএস হাসপাতালের কাছ থেকে মৃতার শাশুড়ি দয়াবতীকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার ভোরে সিরসা টোল এলাকা থেকে নিহত নিকি ভাটির ভাশুর রোহিত ভাটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়েছেন শ্বশুর সত্য বীর। অভিযোগ, নিকিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন তাঁরাও।
২০১৬ সালে ভাটি পরিবারের দুই ছেলে বিপিন এবং রোহিতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল নিকি এবং তাঁর দিদি কাঞ্চনের। দুই মেয়ের বিয়েতে সাধ্যমতো যৌতুক দিয়েছিল তাদের পরিবার। স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ, সোনা— নানা উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুশি ছিলেন না। আরও পণ চেয়ে প্রায়ই দুই বোনকে মারধর করা হত বলে অভিযোগ।