(বাঁ দিকে) দেবেন্দ্র ফডণবীস, ছগন ভুজবল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার রাতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের মন্ত্রিসভার সংরক্ষণ বিষয়ক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর পাঁচ দিনের অনশনে ইতি টেনেছিলেন মনোজ জারাঙ্গে। তার কিছুক্ষণ পরেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মরাঠা সংরক্ষণ আন্দোলনের নেতা মনোজের দাবি মানার কথা জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মরাঠাদের ‘কুনবি’ কৃষক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) কোটায় শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে তাঁরা ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন।
কিন্তু রাত পোহাতেই বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত) জোটের সরকারের অন্দরে মরাঠা সংরক্ষণ নিয়ে মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এল। ফডণবীস সরকারের মন্ত্রী তথা এনসিপি (অজিত) নেতা ছগন ভুজবল জানিয়ে দিলেন, যে পদ্ধতিতে মরাঠাদের সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তিনি তার বিরোধিতা করবেন। এই পদ্ধতিতে ‘প্রকৃত ওবিসি’রা বঞ্চিত হবেন বলে অভিযোগ তুলে ছগনের ঘোষণা, ‘‘সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাব।’’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে মরাঠা জনগোষ্ঠীকে কুনবি শ্রেণিভুক্ত হিসাবে ওসিবি তালিকায় সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিল পাশ হয়েছিল মহারাষ্ট্র বিধানসভায়। তাতে শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্যে মরাঠাদের ‘কুনবি’ শ্রেণিভুক্ত করে তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। ওবিসি নেতা ভুজবল সে সময়ও প্রকাশ্যে মরাঠা সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিলেন। তুমুল রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে বিরোধী জোট ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র তিন দল— কংগ্রেস, উদ্ধবসেনা এবং এনসিপি (শরদ) মরাঠা সংরক্ষণ নিয়ে সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছিল।
গত মাসে নতুন করে মরাঠা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধেছিল। দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজ়াদ ময়দানে অনশনে বসেন মনোজ। ক্রমশ মুম্বইয়ের সীমানা ছেড়ে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে মরাঠা আন্দোলন। তারই জেরে মঙ্গলবার সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ‘মরাঠা কোটা’র দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মনোজ অনুগামীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু ফডণবীসের উপর চাপ বাড়িতে বুধবার থেকেই মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় পাল্টা আন্দোলনে নেমেছে ওবিসি সংগঠনগুলি।
ওই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার নাগপুরে গিয়ে আন্দোলনকারী ওবিসি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। মরাঠা সংরক্ষণের জেরে কোনও অবস্থাতেই ওবিসিরা অসুবিধায় পড়বেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানিয়েছেন, সরকার মরাঠা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ‘কুনবি’ ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক প্রমাণ পরীক্ষা করে ‘কুনবি’ জাতভুক্ত শংসাপত্র প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করবে। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালে মরাঠা সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ চালু করেছিল মহারাষ্ট্রের তদানীন্তন বিজেপি-শিবসেনা জোটের সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাসে তা ‘সংবিধানসম্মত’ নয় জানিয়ে বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছিল, এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য বিধিবদ্ধ ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।