অমরনাথ রামের বাড়িতে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।
ছেলেমেয়েদের ডেকে ঘরে উঁচু জায়গায় রাখা একটি লোহার ট্রাঙ্কে সারিতে দাঁড়াতে বলেছিলেন বাবা। পাঁচ নাবালক তা-ই করেছিল। এর পর সন্তানদের সকলের গলায় দড়ি পরিয়ে অন্য প্রান্ত নিজের গলায় পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন যুবক। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তিন কন্যা মারা গিয়েছে। দুই পুত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যু হয়েছে বাবারও। রবিবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের মুজফ্ফরপুরে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নিজের বাড়িতে ছিলেন ৩৫ বছরের অমরনাথ রাম। হঠাৎ তিনি পাঁচ ছেলেমেয়েকে ডাকেন। বাবার কথায় তিন কন্যা এবং দুই পুত্র আসে। তাদের সকলকে ট্রাঙ্কের উপরে একটি সারিতে দাঁড় করিয়ে গলায় দড়ির ফাঁস পরিয়ে দেন অমরনাথ। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে মোট চার জনকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয়েরা। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন অমরনাথ নিজেও। এ ছাড়া তাঁর তিন মেয়ে, ১২ বছরের অনুরাধা কুমারী, ১১ বছরের শিবানী কুমারী, ৭ বছরের রাধিকা কুমারীর নিথর দেহ উদ্ধার হয়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক পুত্রকে। আর এক পুত্র জানায় সে কোনওক্রমে গলার ফাঁস মুক্ত করেছে। কিন্তু তারও শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা শঙ্কাজনক।
চারটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর তাদের অনুমান, মানসিক হতাশা থেকে এই কাজ করেছিলেন অমরনাথ। তারা জানিয়েছে, পাঁচ সন্তানকে গলায় দড়ি পরিয়ে একটি ট্রাঙ্কের উপর দাঁড়াতে বলেছিলেন বাবা। তিনি নিজেও তা-ই করেছিলেন। গলায় ফাঁস নিয়ে অমরনাখ তাঁর সন্তানদের সঙ্গে ট্রাঙ্ক থেকে লাফ দেন। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে চার জনেরই মৃত্যু হয়। অন্য দিকে, অমরের এক পুত্র শিবম জানিয়েছে, সে কোনও ভাবে গলার ফাঁস খুলতে পেরেছিল। হাসপাতালে ভয়ার্ত গলায় নাবালক বলে, ‘‘আমি আমার বাবা এবং ভাইবোনেরা বাড়িতে ছিলাম। বাবা বাথরুমে গিয়েছিল। আমি মোবাইল নিয়ে ঘাঁটছিলাম। বাথরুম থেকে ফিরে একটি দড়ি দিয়ে আমাদের সকলের গলায় পরিয়ে দেয় বাবা। নিজেও গলায় পরে নেয়। আমি কী ভাবে বেঁচে গিয়েছি...।’’ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছে শিবমের ভাইও।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর অমরনাথের স্ত্রী মারা যান। স্থানীয়েরা বলছেন, তার পর থেকে ওই যুবক মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। আর্থিক সমস্যাও ছিল। পাঁচ সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তবে এই ঘটনার নেপথ্য কারণ সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তদন্ত চলছে। তদন্তকারীরা আশা করছেন, দুই ছেলের বক্তব্য থেকে ঘটনার কারণ আরও ভাল ভাবে জানা যাবে। আপাতত দুই নাবালকেরই চিকিৎসা চলছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা রুজু করেছে। ডাকা হয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও।