এই কাহিনি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের।
উদাহরণ ১।
সম্বন্ধ করে বিয়ে হচ্ছে রেশমির। বিজ্ঞাপনেই মোটা হরফে লেখা ছিল ব্রাহ্মণ পাত্র চাই। গোত্রও উল্লেখ করা ছিল। জাত, কূল, গোত্র না মিললে মেয়ের বিয়ে কি সেই বংশে হতে পারে? সম্বন্ধ করে বিয়ের ক্ষেত্রে তো এটাই প্রথম শর্ত।
উদাহরণ ২।
কলেজের সহপাঠীকে বিয়ে করতে চেয়েছেন তৃণা। ভাল চাকরি, শিক্ষিত পরিবার দেখেও বেঁকে বসেছেন বাবা, মা। পাত্র যে অন্য জাতের। যতই প্রেম করে বিয়ে হোক বংশটা তো দেখতে হবে!
এই কাহিনি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের। দক্ষিণ ভারতের দেশগুলোতে জাত, কুল, গোত্রের বাইরে বিয়ে আজও হাতে গোনাই। কিছু কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে পরিবারে বিয়েও আইনত বা সামাজিক ভাবে সিদ্ধ। কমিউনিটি ফিলিং জোরালো হলেও বৈজ্ঞানিক ভাবে যে এই নিয়ম বিপদ ডেকে আনছে সে বিষয়ে সতর্ক করছেন গবেষকরা। তারা জানাচ্ছে, একই গোষ্ঠী বা বংশের মধ্যে বার বার বিয়ে হওয়ার ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একইরকম ডিএনএ স্ট্রেচ বাড়িয়ে দিচ্ছে জিনগত বা বংশগত রোগের সম্ভাবনা।
গুটি কয়েক বংশের মধ্যেই বিস্তার আটকে থাকলে যে জিনগত সমস্যা দেখা যায়, জেনেটিকসের ভাষায় তাকে বলা হয় ‘ফাউন্ডার ইভেন্ট’। ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের জাত, গোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে হওয়ার কারণে তাদের ডিএনএ-র গঠনে সামঞ্জস্য দেখা যায়। ফলে এদের রিসিসিভ জিন ডিজঅর্ডারের (বাবা, মায়ের থেকে জিনগত সমস্যা) ঝুঁকি অনেক বেশি।
নেচার জেনেটিকস জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির গবেষকরা দক্ষিণ এশিয়ার ২৭৫টি ভিন্ন গোষ্ঠীর ২,৮০০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গবেষণা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি, সিংহলি ও বাংলাদেশিরা।
গবেষক কুমারস্বামী থঙ্গরাজ জানান, দক্ষিণ এশিয়ার ২৬৩টি ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ৮১টি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই (এর মধ্যে ১৪টি গোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১০ লক্ষের উপরে) কোনও বিশেষ রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জম্মু ও কাশ্মীরের গুজ্জর গোষ্ঠী, উত্তরপ্রদেশের বানিয়া গোষ্ঠী, অন্ধ্রপ্রদেশের পাতাপু কাপু গোষ্ঠী, পুদুচেরির যাদব গোষ্ঠী, অরুণাচল প্রদেশের ক্ষত্রিয় আকনিকুলা, নাগাল্যান্ডের নাগা, উত্তরপ্রদেশের কুমার, তেলঙ্গানার রেড্ডি ও বৈশ্য, তামিলনাড়ুন কল্লার ও অরুনথাথিয়ার, মনিপুরি ব্রাহ্মণ। যেমন গবেষণায় দেখা গিয়েছে বৈশ্যদের মধ্যে অন্যান্য গোষ্ঠীর তুলনায় পেটের অসুখে ভোগার প্রবণতা প্রায় ১০০ গুন বেশি। ভারতে বৈশ্যদের সংখ্যা ৩০ লক্ষেরও বেশি। এরা অ্যানাসথেশিয়ার প্রতিও স্পর্শকাতর।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ব্রড ইনস্টিটিউট অব হার্ভার্ড, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর হিম্যান জেনেটিকস, ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়, চেন্নাইয়ের ফেটাল কেয়ার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, নয়ডার এমিটি বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের জিনোম ফাউন্ডেশন, অ্যান্থ্রপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কলকাতা শাখা ও লখনউ-এর বীরবস সাহানি অব প্যালিওসায়েন্সের গবেষকরা এই গবেষণার অংশ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: নতুন ২০ টাকার নোট আনতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের অর্থ সাহায্যে এই গবেষণা করা হয়।