২০১২-র ১৯ জুলাই। কারখানার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে পাঠানো হয়েছিল ১২০০ পুলিশকর্মীকে। —ফাইল চিত্র।
মারুতির কারখানায় হামলা এবং ম্যানেজারকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল হরিয়ানার আদালত। দোষীরা প্রত্যেকেই মানেসরের মারুতি-সুজুকি প্ল্যান্টের কর্মী। দিল্লির প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ওই প্ল্যান্টে ২০১২ সালে এক দল শ্রমিকের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তারা। কনফারেন্স রুমের মধ্যে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার অবনীশ কুমার দেবের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে চলতে থাকা তাণ্ডবে ম্যানেজমেন্টের অন্তত ৫০ জন কর্তা জখম হয়েছিলেন, আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশও। ঘটনার বছর চারেক পর গুরুগ্রামের আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করল।
মারুতি সংস্থা প্রতি বছর যে পরিমাণ গাড়ি তৈরি করে, তার এক তৃতীয়াংশই তৈরি হয় মানেসরের প্ল্যান্টে। ২০১২ সালের বেনজির গোলমালের পর সেই মানেসর প্ল্যান্ট মাস খানেকের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল মারুতি কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগকে ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল। ম্যানেজমেন্টের অভিযোগ ছিল, যে কোনও আলোচনার সময়েই শ্রমিক ইউনিয়ন সংস্থার পদস্থ কর্তাদের আক্রমণ করত। পরিস্থিতি শৃঙ্খলাভঙ্গের পর্যায়ে যাচ্ছিল বলে ম্যানেজমেন্ট মনে করছিল। তাই কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছিল। সে সব নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মানেসর প্ল্যান্টে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেই অসন্তোষই শেষ দিনে তাণ্ডবের চেহারা নেয়। লোহার রড এবং নির্মিয়মান গাড়ির দরজার প্যানেল নিয়ে হামলা চালান শ্রমিকরা। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারকে পুড়িয়ে মারা হয়। সুপারভাইজার এবং অন্য পদস্থ করাদের খুঁজে বার করে হামলা চালানো হয়। গোটা কারখানা চত্বর জুড়ে ভাঙচুর চলে, জায়গায় জায়গায় আগুনও গালিয়ে দেওয়া হয়। ১২০০ পুলিশ পাঠিয়ে কারখানা নিয়ন্ত্রণে এনেছিল প্রশাসন। তবে ৯ জন পুলিশ কর্তাও সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন। ম্যানেজমেন্টের য়ে ৫০ জন কর্তাকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশই রক্তাক্ত ছিলেন, অনেকেই অচেতনও ছিলেন।
তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগের পর মানেসরের কারখানা, ২০১২ সালে। —ফাইল চিত্র।
শ্রমিকদের অবশ্য দাবি ছিল, ম্যানেজমেন্টের বাড়াটে বাউন্সাররা প্ল্যান্টের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়েছিল। সেখান থেকেই নাকি গোলমালের সূত্রপাত।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে এগিয়ে বিজেপি, সাট্টা বাজারে জয়ের খবরেই শুরু উল্লাস
কারখানা চত্বরের বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বহু শ্রমিককে জেরা করা হয়। প্রায় ১৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। শুক্রবার গুরুগ্রামের আদালত অভিযুক্তদের মধ্যে ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ম্যানেজমেন্টের উপর হামলা, সম্পত্তি নষ্ট এবং ম্যানেজারকে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতটি জানিয়েছে। সাজা ঘোষণা হওয়া এখনও বাকি।