আরও পড়াশোনা করে ক্লাস টেনের গণ্ডিও পার করতে চান আম্মা।ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
পড়াশোনার আবার বয়স কী? এ কোনও জ্ঞানগর্ভ শুকনো বাণী নয়।নিজের জীবনে এর পূর্ণ প্রতিফলন ঘটালেন কেরলের এক বৃদ্ধা। ৯৬ বছর বয়সে এসে শুধু যে পড়াশোনা শুরু করলেন তাই নয়। জীবনের প্রথম পরীক্ষাটিতে উত্তীর্ণও হয়ে গেলেন আলাপ্পুঝা জেলার চেপ্পাড গ্রামের কাত্যায়নী আম্মা। গত ৫ অগস্ট কেরল রাজ্য সাক্ষরতা মিশন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে অক্ষরলখ্যম সাক্ষরতা পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়। পরীক্ষা দেন ৪০,৩৬৩ পরীক্ষার্থী। আর তাঁদের মধ্যেই রিডিং টেস্টে উতরে গিয়েছেন কাত্যায়নী ।
তবে আম্মার বাবাও একজন শিক্ষকই ছিলেন। ১২ বছর বয়সেই আর্থিক অনটনের জন্য পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দিতে হয়েছিল কাত্যায়নী আর তাঁর ছোট বোনকে। তখন বাড়ির কাছেই একটি মন্দিরে কাজ জুটিয়েছিলেন দুই বোন।
আলাপ্পুঝা জেলার চেপ্পাড গ্রামের কানিচেনেল্লুর গভর্নমেন্ট লোয়ার প্রাইমারি স্কুলেই পরীক্ষা হয়েছিল। আর পরীক্ষাকেন্দ্রে কাত্যায়নী আম্মা ছিলেন সবার বড়। আম্মার এক শিক্ষিকা সাথী বলছিলেন ‘‘পর পর তিনটে ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। রিডিংয়ে ৩০ নম্বর, মালয়ালমে লেখার জন্য ৪০ নম্বর আর ৩০ নম্বর শুধুই অঙ্কের জন্য। আম্মা তো রিডিং টেস্টে ৩০ এর মধ্যে ৩০ পেয়ে আমাদের চমকে দিয়েছিলেন।’’
আরও পড়াশোনা করে ক্লাস টেনের গণ্ডিও পার করতে চান। ছবি: সৌজন্যে ফেসবুক।
যদিও লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনও অবধি প্রকাশিত হয়নি। তবে আম্মার শিক্ষিকা সাথী বলছিলেন, পরীক্ষা দেওয়ার পর কিন্তু খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না আম্মা। সাথীর কথায়, ‘‘পরীক্ষা দেওয়ার পর আম্মাকে এক্কেবারে খুশি দেখাচ্ছিল না। কারণ, আম্মা পড়েছিলেন অনেক বেশি। আর সেই জায়গায় প্রশ্নপত্র খুবই সহজ হয়েছিল।’’ তবে এখানেই শেষ নয়। অনেক দূর এগিয়ে যেতে চান কাত্যায়নী। আরও পড়াশোনা করে ক্লাস টেনের গণ্ডিও পার করতে চান এই কাত্যায়নী ।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এই কেরল রাজ্য সাক্ষরতা মিশন কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকজন কর্মী লক্ষ্যম ভিদু কলোনীতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই রয়েছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য সরকারি আবাসন। বেশির ভাগ বয়স্ক মানুষই এই সাক্ষরতা অভিযানে অংশ নিতে চাইছিলেন না। কাত্যায়নী এগিয়ে এসেছিলেন নিজের নাম নথিভুক্ত করতে।
কিন্তু কাত্যায়নীর ভিতরে ভিতরে পড়াশোনার প্রতি এত আগ্রহ কবেই বা জন্মাল?
তাঁর ৬০ বছরের কন্যা আম্মিনী ওই বয়স থেকে পড়া শুরু করে ক্লাস টেন অবধি পড়ে ফেলেছিলেন। শুধু অক্ষরলখ্যম সাক্ষরতা পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলেই, কাত্যায়নী গণিত আর মালয়ালম নিয়ে বিগত ছ’য় বছর ধরে লাগাতার পড়াশোনা করে যাচ্ছেন। কাত্যায়নীর কো-অর্ডিনেটর বা শিক্ষিকা সাথী বলছিলেন ‘‘পরীক্ষা শেষ। তাই আম্মাকে দেখে এখন অনেকটাই রিল্যাক্সড মনে হয়। তবে একটা বই থেকে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: আজানে কি শব্দদূষণ, মেপে দেখার নির্দেশ
তবে ইতিমধ্যেই কাত্যায়নী আম্মাকে দেখে বহু মানুষই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ওই আবাসনের কমপক্ষে আরও ৩০ জন এই সাক্ষরতা মিশনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। ২০১০ সালে অক্ষরলখ্যম সাক্ষরতা মিশনের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, আলাপ্পুঝায় প্রায় ৪৭,২৪১ জন নিরক্ষর। তাঁদের মধ্যে ৪৬,৩৪৯ জন ক্লাসে আসতেও আরম্ভ করে দিয়েছিলেন জানুয়ারি থেকেই। আর ৫ অগস্টের পরীক্ষায় বসেছেন প্রায় ৪০,৩৬৩ জন।
আরও পড়ুন: দশ বছর বয়স থেকে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন
এ তো না হয় গেল আলাপ্পুঝায় সাক্ষরতার একটা ছবি। কিন্তু আলাপ্পুঝার বাইরে? সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু কাত্যায়নী আম্মাকে নিয়ে বিস্তর মাতামাতি। জীবনের এই সন্ধিক্ষণে শেখার এমন আগ্রহ দেখে বিজনেস টাইকুন আনন্দ মাহিন্দ্রাও আম্মার ফ্যান হয়ে গিয়েছেন। টুইট বার্তায় আনন্দ মাহিন্দ্রার বক্তব্য ‘‘সত্যিই যদি এমন হয়, ত হলে ইনি আমার রোল মডেল। আমার মস্তিষ্ক সর্বদা সজাগ থাকবে যদি আমার মধ্যেও আম্মার মতো শেখার আগ্রহ তৈরি হয়।’’