বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। ছবি সৌজন্যে উইকিপিডিয়া
ইউনেস্কোর বিচারে অন্যতম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর মতো সংবাদপত্রের ‘মাস্ট ওয়াচ’ তালিকায় দু’নম্বরে কর্নাটকের হাম্পি। প্রায় ৫০০ বছর আগের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য বহন করা এ হেন হাম্পিতেই ধরা পড়ল ইতিহাসকে ধুলিসাৎ করার ছবি। পর পর দাঁড়িয়ে থাকা হাম্পির অনেকগুলি স্তম্ভ ভেঙে দিচ্ছে কয়েক জন যুবক। এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
যদিও ওই ভিডিয়োটি ঠিক কবেকার, অর্থাৎ ঘটনা কখন ঘটেছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম বি পাটিল দাবি করেছেন ভিডিয়োটি তিন বছর আগেকার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই ভিডিয়ো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। বেল্লারির পুলিশ সুপার অরুণ রঙ্গরাজন বলেছেন,‘‘ঘটনার সঙ্গে চার থেকে পাঁচ জন জড়িত। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’
ইনস্টাগ্রামের একটি অ্যাকাউন্টে পোস্ট হয়েছে ভিডিয়োটি। তাতে দেখা যাচ্ছে, দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন একটি স্তম্ভ ঠেলে ফেলে দিচ্ছে দু’তিন জন যুবক। একটি স্তম্ভই ভেঙে দেওয়ার ছবি ধরা পড়লেও পাশেই সার দিয়ে পড়ে রয়েছে এ রকম ১৪টি পিলার। মনে করা হচ্ছে ওই পিলারগুলিও ওই দুষ্কৃতীরাই ফেলে দিয়েছে। তবে সেগুলির ভিডিয়ো পাওয়া যায়নি।
অন্য দিকে,পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক সম্পদে সমৃদ্ধ হাম্পির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরই এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কর্নাটকের জলসম্পদ মন্ত্রী ডি কে শিবকুমার বলেন, ‘‘পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানকে ধ্বংস করার মতো এই ঘটনা আমরা কোনওভাবেই বরদাস্ত করব না।’’
আরও পডু়ন: বিহারে লাইনচ্যুত সীমাঞ্চল এক্সপ্রেসের ৯টি বগি, মৃত ছয়, আহত শতাধিক
চতুর্দশ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে বিজনয়গর সাম্রাজ্য। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বেজিংয়ের পরেই মধ্য যুগের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ছিল হাম্পি। তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে গড়ে ওঠা রাজধানী হাম্পি সেই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ১৫৬৫ সালে মুসলিম সুলতান শাসকদের আক্রমণে বিজয়নগর সাম্রাজ্য পরাজিত হয়। সেই কারণেই হাম্পি তথা বিজয়নগর সাম্রাজ্যকেই ভারতে হিন্দু শাসকদের শেষ নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন ইতিহাসবিদরা।
আরও পডু়ন: রাজীব কুমারকে প্রশ্ন করতে চায় সিবিআই
মুসলিম শাসকরা ধ্বংস করার পরও প্রচুর দুর্গ, নদীর পাড়ের ভাষ্কর্য, রাজপ্রাসাদ, মন্দির, স্মৃতিসৌধ, জলাধারের মতো ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনও বহন করে চলেছে হাম্পি। প্রায় ৪,১০০ একর এলাকার উপর এ রকমই প্রায় ১৬০০ স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে হাম্পিতে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা সংগ্রহশালা হাম্পি। ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ববিদরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যে দুষ্কৃতীরাইতিহাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাঁদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)