অমর সিংহ ও মুলায়ম সিংহ যাদব। — ফাইল চিত্র।
ডানা ছাঁটা দূরে থাক, উল্টে অমর সিংহকেই আজ দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। বুঝিয়ে দিলেন, অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু দল পরিচালনায় তিনিই শেষ কথা।
দু’সপ্তাহ ধরে মুলায়ম পরিবারের বিবাদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অমর সিংহই পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে যাদব পরিবারে ঝামেলা লাগিয়েছেন— এই অভিযোগে সরব ছিলেন অখিলেশ ও রামগোপাল যাদব। অমর সিংহকে একঘরে করতে তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি অখিলেশ গোষ্ঠী। অমরের ডানা ছাঁটার দাবি তোলেন অখিলেশ অনুগামীরা। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টে অমরকে পুরনো পদেই ফেরালেন মুলায়ম।
অনেকেই মন করছেন, জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে দরকষাকষি করতে অমর যাতে সক্রিয় হতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই করে দিলেন মুলায়ম। আজ মুলায়ম হাতে লেখা একটি চিঠিতে অমর সিংহকে জানিয়েছেন, ‘‘আপনাকে দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হল। আশা করছি, উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে আপনি দলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবেন।’’
সমাজবাদী পার্টির সূত্র অবশ্য বলছে, নামেই উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন। আসলে ‘নেতাজি’-র পাখির চোখ লোকসভার ভোট। মুলায়ম চান প্রধানমন্ত্রী হতে। নিজের সেই রাজনৈতিক আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করতে তাঁর অন্যতম ভরসা হলেন অমর সিংহ। সে জন্যই প্রথমে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। তার পর আনা হয় রাজ্যসভায়। আর এখন দেওয়া হল জাতীয় স্তরে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সমাজবাদী পার্টির এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির মুখ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা রয়েছে মুলায়মের।’’ নেতাজি জানেন সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে দর কষাকষির প্রশ্নে সাহায্য করতে পারেন অমর সিংহ। সেই কারণে ভাই শিবপাল যাদবের সঙ্গে পরামর্শ করেই আজ অমরকে নতুন দায়িত্ব দিলেন তিনি।
অমর সিংহের পদপ্রাপ্তিতে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়লেন অখিলেশ-রামগোপাল-আজম খানেরা। দলে অমর সিংহের অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন আজম খান। চলতি বিবাদের সূত্রে অখিলেশ ও রামগোপাল জুটি চেয়েছিলেন শিবপাল ও অমর সিংহের ডানা ছাঁটতে। উল্টে মুলায়ম ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রেখে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রাজ্য স্তরে দলের ভালমন্দ মূলত টিকিট দেওয়ার বিষয়ে তিনি শিবপালের উপরেই ভরসা করছেন। আর জাতীয় স্তরে অন্য দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য থাকছেন অমর।
রাজনীতিকদের মতে, চলতি টানাপড়েনে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন অখিলেশ স্বয়ং। ইতিমধ্যেই দলের সভাপতিত্ব খুইয়েছেন তিনি। পরিস্থিতি যা তাতে বিধানসভা ভোটে হেরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব গেলে কার্যত একলা হয়ে পড়বেন অখিলেশ। তখন না থাকবে সরকার। না হাতে থাকবে দলের রাশ।