অখিলেশের বিকাশ রথে মুলায়মের সুবিশাল প্রতিকৃতিই বলে দিচ্ছে অনেক কথা। ছবি: পিটিআই।
সমর্থকদের মধ্যে সন্ধির বার্তা চারিয়ে দিয়ে রথযাত্রায় রওনা হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব। পতাকা নেড়ে রথযাত্রার সূচনা করলেন সপা সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব। দলের সমর্থকদের আরও চমকে দিয়ে রথযাত্রার সূচনা অনুষ্ঠানে হাজির হলেন সপার প্রদেশ সভাপতি শিবপাল। শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
৩ অক্টোবর শুরু হওয়ার কথা ছিল অখিলেশ যাদবের ‘সমাজবাদী বিকাশ রথযাত্রা’। কিন্তু যাদব পরিবারের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে চলতে থাকা ক্ষমতার লড়াইয়ের জেরে এক মাস পরে শুরু হল মুখ্যমন্ত্রীর সেই রথযাত্রা। বৃহস্পতিবার সপা সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব পতাকা নেড়ে অখিলেশের রথযাত্রার সূচনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের রথযাত্রার সাফল্য কামনা করে এ দিন ভাষণও দিয়েছেন মুলায়ম। দীর্ঘ দিন পর পিতা-পুত্রের মিলন দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির ঢেউ খেলে গিয়েছে সপা কর্মীদের বিশাল জমায়েতে।
চমকের কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর চেয়েও বড় চমক এ দিন সপা কর্মীদের জন্য অপেক্ষায় ছিল। কারণ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত পরস্পরের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করতে থাকা কাকা-ভাইপো এত তাড়াতাড়ি বিভেদ ভুলে এক মঞ্চে হাজির হবেন, সপা কর্মীরা তা একেবারেই আশা করতে পারেননি। কিন্তু সে রকমই হয়েছে বৃহস্পতিবার। অখিলেশের রথযাত্রার সূচনা অনুষ্ঠানে মুলায়মের পাশাপাশি হাজির ছিলেন শিবপাল সিংহ যাদবও। সপার বৈঠক মঞ্চে ক’দিন আগেই অখিলেশের হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাঁকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছিলেন শিবপাল। তার আগেই অখিলেশ আবার শিবপাল ও তাঁর অনুগামীদের বার করে দিয়েছিলেন নিজের মন্ত্রিসভা থেকে। সেই শিবপাল এ দিন মুলায়মের পাশে দাঁড়িয়ে পতাকা নেড়ে সূচনা করেছেন অখিলেশের রথযাত্রার। মুখ্যমন্ত্রীর এবং তাঁর রথযাত্রা কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে এ দিন শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন শিবপাল।
এই বাসে চড়েই সমাজবাদী বিকাশ রথযাত্রায় রওনা হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
অখিলেশের সমাজবাদী বিকাশ রথযাত্রা উপলক্ষে এ দিন লখনউতে যে জমায়েত হয়েছিল, তাতে বিপুল সংখ্যায় সপার কম বয়সী কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে অখিলেশের জনপ্রিয়তার কারণেই ছবিটা এই রকম ছিল, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। মুলায়ম সপার সেই যুব কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে এ দিন বলেছেন, শুধু স্লোগান দিলে হবে না, একটু দৌড়ঝাঁপও করতে হবে। মুলায়ম বলেন, ‘‘কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়েই পরিবর্তন আসে।’’
যে ভাবে রথযাত্রা কর্মসূচির সূচনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন বাবা-কাকা, তাতে অখিলেশকে কিছুটা আপ্লুতই দেখিয়েছে এ দিন। তাই সন্ধির স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টিকে ভাঙার জন্য বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। এটা ঠিক যে আমরা কিছুক্ষণের জন্য বিভ্রান্তও হয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা আবার সঠিক পথে। এটা আমরা বনাম ওরার বিষয় নয়। আমরা সবাই একত্রিত।’’
আরও পড়ুন: প্রশান্তের বৈঠকে জোটের জল্পনা, সঙ্গে নেই নীতীশ
কয়েক দিন আগে পর্যন্তও উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় ছিল যাদব পরিবারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অমর সিংহ-শিবপাল যাদব বনাম অখিলেশ-যাদব-রামগোপাল লড়াইতে আড়াআড়ি ভাঙতে বসেছিল সমাজবাদী পার্টি (সপা)। দলের চেয়ারম্যান মুলায়ম সিংহ যাদব গোড়া থেকেই ভাই শিবপাল এবং বন্ধুবর অমরের পক্ষে ছিলেন। অখিলেশকে প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করছিলেন তিনি। আর অখিলেশের পক্ষে খোলাখুলি সওয়াল করায় সম্পর্কিত ভাই রামগোপাল যাদবকে দল থেকে তাড়িয়েই দিয়েছেন সপার ‘নেতাজি’। নেতৃত্বের কোন্দলেই সবটা সীমাবদ্ধ ছিল না। অখিলেশ এবং শিবপালের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষের সাক্ষীও হতে হচ্ছিল লখনউয়ের রাজপথকে। যাদবকুলের অভ্যন্তরীণ লড়াই ঘিরে কয়েক দিন ধরে উত্তাল ছিল লখনউ। সেই প্রকাশ্য গোলমাল সপ্তাহখানেক আগেই থেমে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অখিলেশ এবং শিবপাল শিবির পরস্পরের মধ্যে সন্ধি করে নিয়েছেন, তেমন কোনও ইঙ্গিত একেবারেই মেলেনি। বরং সপায় ভাঙনের জল্পনাই চলছিল লখনউ এবং দিল্লির আনাচে-কানাচে। বৃহস্পতিবার অখিলেশের রথযাত্রার সূচনা অনুষ্ঠান কিন্তু সে জল্পনায় কিছুটা হলেও জল ঢেলে দিয়েছে।