শিবম মাসরির হাতে রাখি পরিয়েছে অনামতা আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।
একটি হাত। আর সেই হাতই মিলিয়ে দিল দুই রাজ্যের দুই পরিবারকে। এক পরিবারের সন্তানের হাত অন্য পরিবারের সন্তান পেল। আর সেই সূত্রেই দুই পরিবারের কাছে আসা। একটি হিন্দু পরিবার। অন্যটি মুসলিম। এ বছরের রাখি উৎসব দুই পরিবারের কাছে অমূল্য হয়ে রইল। আর থাকবেই না কেন, এক পরিবারের সন্তান যে বেঁচে আছে অন্য পরিবারের সদস্যের হাতে।
বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক। ২০২২ সাল, ৩০ অক্টোবর। মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ের কিশোরী অনামতা আহমেদ উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় সে। ১১০০০ ভোল্টের বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে আসায় গুরুতর জখম হয় অনামতা। তাঁর ডান হাত কেটে বাদ দিতে হয়। সেই ঘটনার পর অনামতা এবং তার পরিবার অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে অনামতার জীবনে এক অন্য মোড় আসে। নতুন করে বাঁচার আশা জেগে ওঠে আহমেদ পরিবারের।
ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর গোরেগাঁও থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে গুজরাতের ভালসারে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রিয়ার মৃত্যু হয়। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও বাঁচানো যায়নি রিয়াকে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় রিয়ার। সন্তানকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছিল পরিবার। কিন্তু তাদের আশার আলো দেখান চিকিৎসক ঊষা মাসরি। রিয়ার মা তৃষ্ণা এবং বাবা ববিকে বোঝানো হয় রিয়ার অঙ্গদানের জন্য। কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস, হাত, কর্নিয়া দান করা হয়। ঘটনাচক্রে, ভালসারে অনামতার পরিবার জানতে পেরেছিল বিষয়টি। একটি অসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রিয়ার হাত পায় আহমেদ পরিবার। অস্ত্রোপচার করে অনামতার কাটা হাতে রিয়ার হাত জুড়ে দেওয়া হয়। আর সেই হাতের সূত্র ধরেই মুম্বই আর গুজরাতের দুই পরিবার কাছে আসে। রিয়ার পরিবার জানতে পারে মুম্বইয়ের আহমেদ পরিবারের কন্যা অনামতার হাত অস্ত্রোপচার করে তাদের কন্যা রিয়ার হাত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, অসরকারি সংস্থার সূত্র ধরে আহমেদ পরিবারও জানতে পারে, যে হাতটি অনামতা পেয়েছে, সেটি মুম্বইয়ের মাসরি পরিবারের কন্যা রিয়ার হাত।
তার পর থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রাখি উৎসবকে কেন্দ্র করে দুই পরিবার মিলিত হয়েছে। মুম্বই থেকে ভালসারে রিয়াদের বাড়িতে গিয়েছে অনামতা। সেখানে রিয়ার দাদা শিবমকে রাখি পরিয়েছে সে। অনামতা বলে, ‘‘আমার কোনও দাদা নেই। শিবমও তার একমাত্র বোন রিয়াকে হারিয়েছে। শিবমই এখন থেকে আমার দাদা। প্রতি বছর ওর হাতে রাখি পরাব।’’ রিয়ার মা বলেন, ‘‘অনামতা যখন শিবমকে রাখি পরাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল রিয়াই ওকে রাখি পরাচ্ছে। কারণ, অনামতার মধ্যেই রিয়া বেঁচে আছে। ওর ডান হাতটি তো রিয়ারই। আমার মেয়েই ওর দাদাকে রাখি পরাল। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে।’’