National News

গো-বধের ধুয়ো তুলে এ বার গিরিডির গ্রামে হামলা গোরক্ষকদের

গত দু’বছরে ধরে মাসে প্রায় একটা করে এমন আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গোরক্ষকদের হাতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মারাও গিয়েছেন কয়েক জন। মহম্মদ আখলাক থেকে উসমান— তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৬:৫১
Share:

উত্তাল গিরিডির বেরিয়া-হাতিটাঁড় গ্রাম। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে

বল্লভগড়ের পর এ বার ঝাড়খণ্ডের গিরিডি। গোরক্ষকদের তাণ্ডব যেন থামছে না কিছুতেই! গত দু’বছরে ধরে মাসে প্রায় একটা করে এমন আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গোরক্ষকদের হাতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মারাও গিয়েছেন কয়েক জন। মহম্মদ আখলাক থেকে উসমান— তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে গোরক্ষকদের হাতে গুরুতর জখম মহম্মদ উসমান আনসারি। আক্রমণকারীদের হাত থেকে রেহাই পাননি তাঁর পরিবারের লোকজনও। উসমানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গিরিডি জেলার দেওরি থানা এলাকার বেরিয়া-হাতিটাঁড় গ্রামে গত কাল রাতে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসেছে। এলাকায় চলছে পুলিশি টহলদারিও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গিরিড শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের ওই গ্রাম সংলগ্ন বাজারে একটি মৃত গরু পড়ে থাকতে দেখা যায়। গরুটির গলায় কাটা দাগও ছিল। ওই অবস্থায় গরুটিকে পড়ে থাকতে দেখে কিছু লোকের সন্দেহ গিয়ে পড়ে উসমানের উপর। ওই গ্রামেই উসমান গরুর দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী বিক্রি করে। এর পরেই শ’খানেক লোক উসমানের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে পাথড় ছুড়তে থাকে। পরিবারের সদস্যেরা বাইরে বেরিয়ে এলে, তাঁদের মারধর শুরু করে হামলাকারীরা। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে পুলিশকেও পড়তে হয় প্রতিরোধের মুখে। রাস্তা অবরোধ করে পুলিশের উপর ইট বৃষ্টি শুরু করে উত্তেজিত জনতা। প্রায় দু’ঘন্টার চেষ্টায় পুলিশ উসমান ও তাঁর পরিবারকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অপরাধীরা কঠিনতম শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেই জুনেইদের গ্রামের

পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শূন্যে ২৪ রাউন্ড গুলি চালাতে হয়। পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণ পণ্ডিত নামে এক স্থানীয় গ্রামবাসী জখম হন। হাজারিবাগের ডিআইজি ভিমসেন টুটি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ উসমান এবং কৃষ্ণ, দু’জনকেই ধানবাদের পাটলিপুত্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। উসমানদের পরিবারের সবাই নিরাপদে আছেন বলেও ডিআইজি জানিয়েছেন।

উসমানের পরিবারের উপর এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় মানুষ বিস্মিত! গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, গরুর মাংস কেনাবেচার সঙ্গে কোনও ভাবেই উসমান জড়িত নন। বহু দিন ধরেই তাঁদের গরুর দুধের ব্যবসা। ওই গ্রাম ও আশপাশের সব ধর্ম, সব সম্প্রদায়ের মানুষই উসমানের গ্রাহক। হাসিখুশি উসমানের সঙ্গে সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই সদ্ভাব রয়েছে। এমন একটি পরিবারের উপরে কিছু মানুষ চড়াও হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

২০১৫-র সেপ্টেম্বরে দিল্লির অদূরে দাদরি গ্রামে গোরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হন মহম্মদ আখলাক। ফ্রিজে গরুর মাংস রাখা আছে, এই অভিযোগে ওই প্রৌঢ়ের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তাঁকে এমন ভাবে মারধর করা হয় যে, ঘটনাস্থলেই মারা যান আখলাক। এর পর দেশ জুড়ে এ রকম একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিন আগে হরিয়ানায় ট্রেনে মধ্যে জুনেইদ নামে এক কিশোরের ব্যাগে গরুর মাংস আছে এই অভিযোগে তাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। দিল্লি থেকে অল্প দূরে হরিয়ানার ওই ঘটনা যে কোনও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, তা ফের প্রমাণ করল গিরিডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন