জৈনদের উৎসব উপলক্ষে মুম্বইয়ে মাংস বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করল বম্বে হাইকোর্ট। আজ মহারাষ্ট্রের পথে হেঁটে জৈনদের উৎসব উপলক্ষে মাছ মাংস বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বসুন্ধরা রাজের রাজস্থান ও নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত। সেই সঙ্গে হিন্দু ডোগরা রাজাদের আমলের আইন মেনে জম্মু-কাশ্মীরে গোমাংস বিক্রি ও গবাদি পশু হত্যা পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট। ফলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাংস বিক্রি ক্রমশই একটি বড় বিতর্কের চেহারা নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহন্মুম্বই পুরসভার কমিশনার অজয় মেটা জানান, জৈনদের উৎসব উপলক্ষে ১০, ১৩, ১৭ এবং ১৮— এই চার দিন মুম্বইয়ে বন্ধ থাকবে সব রকম মাংস বিক্রি। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে যায় মুম্বইয়ের পাঁঠার মাংস বিক্রেতাদের সংগঠন।
আজ বিচারপতি অনুপ মোহতার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে, ‘‘মুম্বইয়ের মতো মেট্রোপলিটান শহরে এমন নিষেধাজ্ঞা কী ভাবে কার্যকর করা সম্ভব? প্রাণী হত্যা ও মাংস বিক্রি বন্ধ না হয় করা গেল। কিন্তু প্যাকেজিং করা যে মাংস ইতিমধ্যেই বাজারে রয়েছে, তার কী হবে?’’ প্রকাশ্যে প্রাণীহত্যা ও প্রকাশ্যে দোকানে মৃত প্রাণী ঝুলিয়ে রাখায় জৈন সম্প্রদায়ের আপত্তি থাকলে তা বন্ধ করা যাবে বলে মন্তব্য করেছে বেঞ্চ। বিষয়টি নিয়ে আগামিকালের মধ্যে রাজ্য সরকার ও বৃহন্মুম্বই পুরসভার মত জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠেছে। মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের শরিক শিবসেনাই এই নিষেধাজ্ঞা মানতে রাজি নয়। রাজনীতিকদের মতে, গোমাংস বিক্রি বন্ধের মতো বিষয়ে সঙ্ঘের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য বিজেপি। তাই জৈনদের উৎসব উপলক্ষে মাংস মাছ বিক্রি বন্ধ করে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে তারা। কিন্তু জৈনদের বেশি গুরুত্ব দিলে মরাঠি আবেগে ঘা লাগার ভয় আছে শিবসেনা ও রাজ ঠাকরের এমএনএসের। তাই তারা এর বিরোধিতায় নেমেছে।
আজ মুম্বইয়ের দাদার এলাকায় মাংস বিক্রি বন্ধের প্রতিবাদে অভিনব বিক্ষোভ দেখায় শিবসেনা-এমএনএস। মুরগির মাংস বিক্রি করতে ছোট ছোট দোকান খুলে ফেলে এমএনএস। মাংস বিক্রি বন্ধের নির্দেশ সংক্রান্ত পুরসভার নোটিসও ছিঁড়ে ফেলা হয়। মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র শাকিল আহমেদের কথায়, ‘‘সঙ্ঘের নির্দেশে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে তুষ্ট করতে এই পদক্ষেপ করছে বিজেপি। এটা পুরোপুরি গণতন্ত্র-বিরোধী। মহারাষ্ট্রে আমরা প্রথম থেকেই এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছি।’’
তবে রাজনৈতিক বিরোধিতায় মাছ-মাংস বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। উল্টে মিরা-ভায়ান্ডার এবং নভি মুম্বই পুরসভা এলাকাতেও মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের পথে হেঁটে জৈনদের এই উৎসব উপলক্ষে মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজস্থান ও গুজরাতও। আজ রাজস্থান সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, জৈনদের উৎসব চলাকালীন ১৭, ১৮ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর মাছ-মাংস বিক্রি বন্ধ থাকবে গোটা রাজ্যে। জৈনদের উৎসব উপলক্ষে গবাদি পশু ও পাঁঠা হত্যা বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে আমদাবাদ প্রশাসন।
আবার এ দিনই জম্মু-কাশ্মীরে গোমাংস বিক্রি ও গবাদি পশুহত্যা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট। গোমাংস বিক্রি ও গবাদি পশুহত্যার বিরুদ্ধে হিন্দু ডোগরা রাজাদের আমলের আইন রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। কিন্তু সেই আইন ঠিক মতো কার্যকর করা হচ্ছে না বলে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ওই আইন কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ফলে, ভূস্বর্গেও শুরু হয়েছে মাংস-বিতর্ক। হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে শনিবার বন্ধ ডেকেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা।