Narendra Modi

জনস্বার্থে মোদীর দান ১০৩ কোটি টাকা, পিএম কেয়ার্স নিয়ে বিতর্ক সামলাতে পরিসংখ্যান!

পিএম কেয়ার্স নিয়ে বিতর্কের মাঝেই এই খতিয়ান সামনে আনা কাকতালীয় ঘটনা নয়, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:০৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

পিএম কেয়ার্স তহবিলে দাতাদের নাম নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর। পিএমও-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের পকেট থেকে দেওয়া ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা হয়েছিল পিএম কেয়ার্স তহবিল। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে ‘নমামি গঙ্গে’ থেকে শুরু করে শিশুকন্যাদের পড়াশোনা— বিভিন্ন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দান করা অর্থের খতিয়ান। যা ছাড়িয়েছে ১০৩ কোটিরও বেশি টাকা। সরকারি ভাবে তা প্রকাশ না করা হলেও, ‘প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্টেন্স অ্যান্ড রিলিফ ইন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনস ফান্ড’ বা পিএম কেয়ার্স নিয়ে বিতর্কের মাঝেই এই খতিয়ান সামনে আনা কাকতালীয় ঘটনা নয়, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ফলে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এক আধিকারিক বলেন, “পিএম কেয়ার্স তহবিল গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাতে নিজের পকেট থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।” সেই সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, জনস্বার্থে এর আগেও বিভিন্ন প্রকল্পে দানধ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দানের সীমা ছাড়িয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। তাঁর কথায়, “জনস্বার্থে দীর্ঘ দিন ধরেই দান করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিশুকন্যাদের শিক্ষা, দুঃস্থদের সাহায্য করাই হোক বা গঙ্গায় বর্জ্য সাফাইয়ের প্রকল্প— সবেতেই দান করেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ওই দানের আর্থিক মূল্য ছাড়িয়েছে ১০৩ কোটি টাকা।”

মূলত করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার জন্য গঠিত হলেও পিএম কেয়ার্স তহবিল নিয়ে গোড়া থেকে বিতর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন ফের নতুন করে পিএম কেয়ার্সের মতে আরও একটি ফান্ড গঠন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তা ছাড়া, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে এর টাকা হস্তান্তর করা বা এই তহবিলের সমস্ত তথ্য প্রকাশের জন্য বিরোধীরা বরাবরই দাবি করে আসছে। প্রথম দাবিটি শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিলেও পিএম কেয়ার্সের তথ্য প্রকাশ করা সংক্রান্ত মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এই আবহে বুধবার ২০১৯-’২০ আর্থিক বর্ষে পিএম কেয়ার্স তহবিলে জমা পড়া অর্থ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইন অনুযাী, তহবিল গঠনের পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, মাত্র পাঁচ দিনে ৩০৭৬ কোটি ৬২ হাজার টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র এ দেশের থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৩০৭৫ কোটি ৮৫ হাজার টাকা। এবং বিদেশ থেকে ওই তহবিলে জমা পড়়েছে ৩৯ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। এ ছাড়াও জানানো হয়েছে, ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ওই তহবিল চালু করা হয়েছিল। প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা এসেছে সুদ হিসাবে। তবে জমার খতিয়ান প্রকাশ করলেও, কারা এই তহবিলে অর্থদান করেছেন, তাঁদের নাম জানানো হয়নি। যা নিয়ে পিএম কেয়ার্স তহবিল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত কাল এই তথ্য প্রকাশের পর কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করেছেন, দাতাদের নাম প্রকাশ্যে আনার জন্য। নাম প্রকাশ করতে তহবিলের ট্রাস্টিরা কেন ভয় পাচ্ছেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: সেনায় মহিলাদের সাহায্য করা উচিত, তবে কত দূর পর্যন্ত? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই ভারতে হামলা চিনের, দাবি মার্কিন কূটনীতিকের​

Advertisement

এ দিন বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব না দিলেও পিএমও থেকে বেসরকারি ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন খাতে দানের খতিয়ান। পিএমও-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, গত বছর কুম্ভমেলায় স্যানিটেশন কর্মীদের কল্যাণে গঠিত একটি তহবিলে নিজের জমানো টাকা থেকে ২১ লক্ষ টাকা দান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় সোল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর ওই পুরস্কার অর্থের ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকাও গঙ্গায় বর্জ্য সাফাইয়ের কাজে দান করেছেন তিনি। বিভিন্ন স্মারক নিলাম করে আরও ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা গঙ্গাসাফাই অভিযানে দান করেছেন মোদী। পাশাপাশি, ২০১৫-তে গঙ্গাদূষণ মুক্তির প্রকল্প ‘নমামি গঙ্গে’-তে মোদীর দেওয়া অর্থের পরিমাণ ৮ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। বহু পুরস্কার নিলাম করেই ওই টাকা এসেছে তাঁর কাছে। পিএমও-র আর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে কার্যকাল শেষ করার পর নিজের জমানো ২১ লক্ষ টাকাও ওই রাজ্যের কর্মচারীদের কন্যাসন্তানদের শিক্ষাখাতে দান করেছেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পাওয়া সমস্ত পুরস্কার নিলাম করে পাওয়া ৮৬ কোটি ৯৬ হাজার টাকাও দান করেছেন শিশুকন্যাদের শিক্ষায় গঠিত একটি প্রকল্পে।

পিএম কেয়ার্স নিয়ে কংগ্রেসের এই আক্রমণের পর দিনই তা নিয়ে সরকারি ভাবে না হলেও এই তথ্য দিয়েছে পিএমও। তবে এই বিতর্কের আবহে গোটাটাই যে কাকতালীয় নয়, তা মনে করছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন