নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
মন্ত্রীমশাই বিমান ধরতে সবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। ফোন প্রধানমন্ত্রীর—‘মন্ত্রী হয়ে জিন্স পরে বিদেশ যাচ্ছেন?’ হতবাক মন্ত্রী ফের বাড়ি ফিরে পোশাক বদলালেন।
বিরোধীদের প্রশ্ন, মন্ত্রীদের গতিবিধির উপর যে প্রধানমন্ত্রীর এত তীক্ষ্ণ নজর, তিনি নাকি জানতেন না তাঁর মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি গত রাতে ‘ভুয়ো খবর’ ঠেকাতে সাংবাদিকদের শাস্তির বিধান দিয়েছেন! আজ যখন ‘জানলেন’, তৎক্ষণাৎ সেই নিয়ম প্রত্যাহার করতে বললেন।
তবু থেকে গেল আশঙ্কা এবং বেশ কিছু প্রশ্ন। কারণ, ‘ভুয়ো’ খবর প্রতিরোধে এবং সাংবাদিকদের সরকারি স্বীকৃতি কেড়ে নিতে যে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার বিবৃতি! ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভুয়ো খবর ঠেকাতে সরকার কিছু ব্যবস্থা নিলে তা দোষের নয়। খবর, তথ্য, পরিসংখ্যান বা রিপোর্ট আংশিক বা পুরোটাই ভুল হলে তা ‘ভুয়ো’ বলে গণ্য করা হবে। ব্যক্তিবিশেষ, প্রতিষ্ঠান বা সরকার এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে কাউন্সিল তা যাচাই করে ক্ষেত্রবিশেষে সাংবাদিকদের সরকারি স্বীকৃতি সাসপেন্ড বা বাতিল করবে। এই বিবৃতিতে স্মৃতির বিবৃতির ‘ছায়া’ দেখতে পান অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এডিটর্স গিল্ড।
স্মৃতির মন্ত্রক গত রাতে হঠাৎই নিয়ম বদলে জানায়, ‘ভুয়ো খবর’ প্রমাণ হলে সাংবাদিকদের সরকারি স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হবে। প্রথম দফায় ৬ মাসের জন্য, দ্বিতীয় দফায় এক বছর, তৃতীয়বার পাকাপাকি। ক্রুদ্ধ বিরোধী দল ও সাংবাদিককুলের বক্তব্য, সম্প্রতি যে সব খবরকে ‘ভুয়ো’ বলছেন স্মৃতি, সেগুলি আদৌ সেই শ্রেণিভুক্ত নয়। সরকারের আসল লক্ষ্য সাংবাদিকদের ভয় দেখানো। ‘ভুয়ো খবর’-এর কারখানা বিজেপির। অথচ পদক্ষেপ নেই তাদের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর ভুরি ভুরি ‘ভুয়ো’ প্রতিশ্রুতির শাস্তিই বা কোথায়?
ক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে উঠতেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর আজ জানায়, তিনি নির্দেশ প্রত্যাহার করে প্রেস কাউন্সিলের উপরেই বিষয়টি ছেড়ে দিতে বলেছেন। স্মৃতিও জানান, মিলেমিশে আলোচনা করে ভুয়ো খবর রোখার সমাধান খুঁজতে তিনি রাজি।
কিন্তু সাতসকালে এই নাটকীয় ভোলবদলের পর বিরোধীদের প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদীই যদি না জানেন যে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন, তা হলে কি তাঁর রাশ আলগা হচ্ছে? না তিনি জেনেশুনে স্মৃতিকে ছাড় দিয়েছিলেন? রাহুল গাঁধী টুইট করেন, প্রধানমন্ত্রী ‘নিজের’ই নির্দেশ বদলালেন। ভয় আর নিয়ন্ত্রণহীনতার লক্ষণ স্পষ্ট।
বিজেপি সূত্রের মতে, ভোটের বছরে দলিত সমস্যা, প্রশ্ন-ফাঁসে হাঁসফাঁস সরকার। সেই সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বিবাদে আর জড়াতে চাইলেন না মোদী। রাজীব গাঁধীও মানহানি-বিরোধী আইন এনেছিলেন। চাপের মুখে তাঁকেও পিছু হটতে হয়েছিল। পরিস্থিতি বুঝে মোদী তাই ২৪ ঘণ্টা সময়ও নিলেন না।