লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কখনই আপস করবে না তাঁর সরকার। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আবার এক বার কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার মোদী জোরের সঙ্গে দাবি করেন, দেশের কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের স্বার্থরক্ষার জন্য তিনি দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! আমেরিকার নাম সরাসরি না নিলেও মোদী নিশানায় ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার।
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির জট এখনও কাটেনি। কেন্দ্রের একাধিক সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির ক্ষেত্রে অন্তরায় মূলত কৃষি এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য নিয়ে দুই দেশের একমত হতে না-পারা। আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে নারাজ নয়াদিল্লি। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চললেও ইতিমধ্যেই ভারতের উপর দু’দফায় মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, শুল্ক নিয়ে আলোচনা না-হলে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কোনও কথা নয়! সেই হুঁশিয়ারির কাছে যে ভারত মাথা নত করবে না, শুক্রবার আরও এক বার স্পষ্ট করেন মোদী।
লালকেল্লার ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা আমাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তাই ভারত সরকার কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনও আপস করবে না। দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মোদী।’’
‘আত্মনির্ভর ভারত’ নিয়ে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হওয়া বিপর্যয়ের অন্যতম অংশ। আমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে।’’ একবিংশ শতাব্দীকে ‘প্রযুক্তি-চালিত শতাব্দী’ বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। তিনি জানান, তাঁর সরকার সৌর, হাইড্রোজেন এবং পারমাণবিক খাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছে। মোদীর কথায়, ‘‘আমাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা অনেক দেশের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হলে আমাদের জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করতে হবে।’’
মোদী মনে করেন, ‘‘এখন ইতিহাস লেখার সময়। বিশ্ববাজারকে আমাদের শাসন করতে হবে।’’ স্বাধীনতা দিবসে নতুন মন্ত্র বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘কম দাম, উচ্চ মান’ এই মন্ত্র সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মোদীর কথায়, ‘‘বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বাড়ছে। এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের সময়।’’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্যদের ছোট করে আমাদের শক্তি নষ্ট করা উচিত নয়। নিজেদের শক্তি কী ভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে দিকে নজর দেওয়াই উচিত। আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্যের উপর মনোনিবেশ করতে হবে। আমরা চাই, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা স্বদেশী পণ্যের উপর জোর দিন। যদি সরকারি নীতিতে কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে তা আমাকে জানান।’’