Conflict in Myanmar

মায়ানমারের ‘চিন’ দখল বিদ্রোহীদের! প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে মিজ়োরামে ৩৯ সেনা-সহ ৫,০০০

‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’, ‘আরাকান আর্মি’, ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) জোটে যোগ দিয়েছে ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ ও ‘চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

আইজল শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২১
Share:

ভারত সীমান্তে মায়ানমার সেনা। ছবি: রয়টার্স।

বিদ্রোহী জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর হামলায় একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে মায়ানমার সেনার। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাই ভারতে ঢুকে পড়ছে তারাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজ়োরামে ঢুকে পড়েছেন অন্তত ৫,০০০ মায়ানমারের নাগরিক। মিজ়োরাম পুলিশ জানিয়েছে, সেই দলে রয়েছেন ৩৯ জন সেনা সদস্যও।

Advertisement

মিজ়োরাম পুলিশের আইজি লালবিয়াকথাঙ্গা খিয়াংটে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মিজ়োরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মায়ানমার সেনার রিখাওদর এবং খাওমাওয়ি ছাউনি দু’টি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বাহিনী দখল করে। প্রাণভয়ে ৩৯ জন মায়ানমার সেনা জ়োকাওথান সীমান্ত চেকপোস্ট পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁরা এ দেশে আশ্রয় চেয়েছেন।’’ লালবিয়াকথাঙ্গা জানান, সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামেরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। তাই মায়ানমারের প্রায় ৫,০০০ গ্রামবাসী আতঙ্কে ভারতে চলে এসেছেন।

মিজ়োরাম পুলিশ সূত্রের খবর, গুলিতে জখম কয়েক জন গ্রামবাসীকে চাম্পেই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুও হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর বিধানসভার ভোটপর্ব মিটলেও এখনও ভোটগণনা হয়নি মিজ়োরামে এই পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমনে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। মিজ়োরাম ছাড়াও উত্তর-পূর্বের অরুণাচল প্রদেশ এবং হিংসাদীর্ণ মণিপুরের সঙ্গেও মায়ানমারের স্থলসীমান্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নজরদারিতে নিযুক্ত বিএসএফ এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর।

Advertisement

প্রসঙ্গত, অক্টোবরে মধ্যপর্বে মায়ানমারের তিনটি বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে গিয়েছে। মায়ানমার-চিন সংযোগরক্ষাকারী প্রধান সড়কও বিদ্রোহীদের দখলে চলে গিয়েছে। এ বার লড়াই বেধেছে পশ্চিমের চিন প্রদেশে।

গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে মায়ানমারের লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া হয়েছেন বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে। এক দশক আগের রোহিঙ্গা বিতাড়ন পরিস্থিতির পরে তাই মায়ানমারের বর্তমান গৃহযুদ্ধ নতুন করে ‘শরণার্থী সমস্যা’ তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চিন্তা বেড়েছে নয়াদিল্লির। সোমবার মিজ়োরাম সীমান্তে হামলায় তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোটের পাশাপাশি, পশ্চিম মায়ানমারে সক্রিয় দুই বিদ্রোহী বাহিনী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ)-এর যৌথবাহিনী পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। মায়ানমারের চিন স্টেটে রয়েছে তাদের সদর দফতর ক্যাম্প ভিক্টোরিয়া। ওই প্রদেশের বড় অংশই এখন বিদ্রোহীদের দখলে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। আড়াই বছরের সেনা সরকার এই প্রথম এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল বলে মনে করা হচ্ছে। মায়ানমারের ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’ (এসএসি)-এর প্রেসিডেন্ট মিয়ন্ত শোয়ে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘‘দ্রুত, কার্যকরী পদক্ষেপ না-করলে আমাদের দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।’’ পরিস্থিতি কার্যত সেই দিকেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন