ভোটে মহারাষ্ট্র

নাগপুরে সন্ধান নেই নিতিনের

এত দিন যিনি ভোট এলে চরকি পাক খেতেন নাগপুর জুড়ে, সেই নিতিন গডকড়ী এ বার সপ্তাহে পাঁচটি করে সভা করেছেন কি না তা মনে করতে পারছেন না তাঁর ঘনিষ্ঠেরাই।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নাগপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০৩
Share:

নিতিন গডকড়ী।

তিনি কোথায়?

Advertisement

নিরুদ্দেশ বলে এখনও পোস্টার পড়েনি, কিন্তু পড়তে কত ক্ষণ!

এত দিন যিনি ভোট এলে চরকি পাক খেতেন নাগপুর জুড়ে, সেই নিতিন গডকড়ী এ বার সপ্তাহে পাঁচটি করে সভা করেছেন কি না তা মনে করতে পারছেন না তাঁর ঘনিষ্ঠেরাই।

Advertisement

অথচ, গত দু’দশক ধরে নাগপুরের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন গডকড়ী। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠই শুধু নন, খেটেখুটে নাগপুর-সহ গোটা বিদর্ভ এলাকায় বিজেপিকে দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শিষ্য দেবেন্দ্র ফডণবীস যে পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যপাট দখল করে নেবেন, তা হয়তো ভাবেননি ঝানু রাজনীতিকও। অথচ গডকড়ীই তাঁকে নাগপুরের মেয়র পদে বসিয়েছিলেন। আর আজ মোদী-শাহের সমর্থনে দেবেন্দ্র এতটাই শক্তিশালী, নিজভূমে পরবাসী হয়ে পড়েছেন গড়কড়ী। দিল্লিতেই সময় কাটাচ্ছেন বেশি। এরই মধ্যে অমিত প্রকাশ্যে ফডণবীসকে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন। বুধবার স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী প্রচারে এসে বলেছেন, দেবেন্দ্র-নরেন্দ্র সুপারহিট ফর্মুলা আবার ‘হিট’ করানোর কথা।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, গডকড়ীর নির্দেশে বুথ পর্যায়ে কর্মীদের একাংশ বসে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নাগপুর এলাকার ১২টি আসনে বেকায়দায় পড়তে পারে বিজেপি এবং গড়কড়ী দলের নাক কেটে ব্যক্তিগত আধিপত্যের লড়াইয়ে জয় পেতে পারেন। যদিও তাতে দলে তাঁর অবস্থা সুখকর হবে না।

ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, গডকড়ী সঙ্ঘের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত, ফলে পিছন থেকে ছুরি তিনি মারবেন না। যদিও বিদর্ভ-সহ গোটা মহারাষ্ট্রে তাঁর প্রার্থীদের বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে, এই ‘রাগে’ কার্যত
বসে গিয়েছেন গডকড়ী। রাজ্য-রাজনীতিতে তাঁকে আরও অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে মোদী-শাহ ওই কাজ করেছেন বলে ঘোর চর্চা নাগপুরের রাজনৈতিক অলিন্দে।

বিজেপির এই অন্তর্দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে চাইছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মুকুল ওয়াসনিক। সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ ওই নেতা দীর্ঘদিনের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকে এড়িয়ে প্রার্থী দিয়েছেন বিদর্ভে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, নাগপুর শহরকে কেন্দ্র করে যে ছ’টি আসন রয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসের কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম নাগপুরের আসন বাদ দিলে বাকি চারটিতে লড়াইয়ে রয়েছে কংগ্রেস। গত বিধানসভায় যে নাগপুর (শহর ও গ্রামীণ) ১২টি বিধানসভার মধ্যে ১১টিতে জিতেছিল বিজেপি, এ বার সেখানে কংগ্রেসের আসন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও নাকি রয়েছে।

যদিও নাগপুরে যে বিজেপিই ‘ফেভারিট’, তা চক্কর মারলেই বোঝা যায়। গত দু’বারের জয়ী দেবেন্দ্র নিজের কেন্দ্রে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে মন দিয়েছেন রাজ্যের অন্য প্রান্তে। লোকসভায় যেমন বালাকোট, তেমনই এ বার কাশ্মীরে ৩৭০ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত উতরে দেবেই বলেই দাবি করলেন বিজেপি কর্মী অজয় খাডসের। তাঁর কথায়, সঙ্ঘের মর্যাদার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে এই শহরের সঙ্গে। কিন্তু সঙ্ঘ সদর দফতর যে ওয়ার্ডে, সেখানে কেন পুর ভোটে বিজেপি হেরে গিয়েছে সেই উত্তর নেই খাডসের কাছে।

অটোওয়ালা থেকে হোটেল ম্যানেজার, শো-রুমের কর্মী—সকলেরই মুখ ভার। অর্থনীতির বেহাল দশায় বিক্রি-বাটা তলানিতে। কিন্তু সকলেরই মতে, এর পরও বিজেপি জিতবে। মানুষের ক্ষোভ মেনে নিয়েও স্থানীয় বিজেপি নেতা রবীন্দ্র কস্তুরের দাবি, ছাত্র-যুব সমাজ পাশে রয়েছে। এবং তা বোঝাও যায় মহারাজবাগের কৃষি বিদ্যাপীঠ কিংবা অমরাবতী রোডের নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বললে। তাঁদের মূলত দু’টি কথা— এক, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব, দ্বিতীয়ত, উপযুক্ত বিকল্প রাজনৈতিক দলের অভাব।

তবু ভোটের বাজারে কিছু প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। নাগপুর যে নাগ নদীর নামে, সেটি গডকড়ী গত এক দশক ধরে সাফ করানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও কাজ এগোয়নি এক ফোঁটা। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নাগপুরের জন্য নতুন শিল্পতালুক ও বছরে কয়েক লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফডণবীস। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কংগ্রেস প্রার্থী আশিস দেশমুখের দাবি, “শিল্পতালুকের দেওয়াল তোলা ছাড়া কোনও কাজ হয়নি। আর চাকরি চলে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নাগপুর মেট্রোর যৌক্তিকতা নিয়েও।”

দু’চাকা ও অটো নির্ভর শহরে খালি কামরা নিয়ে দৌড়চ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের মেট্রো। গডকড়ীর ইলেকট্রিক বাস দাঁড়িয়ে থেকে বিবর্ণ হচ্ছে বাস গুমটিতে।

তাতে কী...? রামদাসপেঠে বিজেপির কার্যালয়ে বসে স্রেফ মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ফডণবীসের প্রচার প্রধান এবং ডান হাত সন্দীপ জোশী বললেন, ‘‘গতবারের চেয়ে বেশি মার্জিনে জিতব। লোকসভার ফলাফলের রিপ্লে হবে বিধানসভায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন