দাঙ্গা আর ডামাডোলের মধ্যে দু’দিন কাটিয়ে অবশেষে আজ ছন্দে ফিরল বেঙ্গালুরু। কার্ফুর চাদর সরতেই ফের বাস নামল হাইওয়েতে। হাটেবাজারে দেখা মিলল সেই চেনা ভিড়ের। সকাল থেকেই স্বাভাবিক হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। খুলেছে স্কুল-কলেজও। জল-যুদ্ধের জেরে গত দু’দিনে ২৫ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা সামাল দিতেই যেন ফের চেনা মেজাজে ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’। তাল মিলিয়ে হাঁটতে চাইছে গোটা কর্নাটক রাজ্যই।
আজ সকাল ন’টা নাগাদ শহরের ১৬টি থানা এলাকা থেকে কার্ফু তুলে নেয় বেঙ্গালুরু পুলিশ। সতর্কতামূলক ১৪৪ ধারা অবশ্য থাকছে। কাল তাই রাজ্যে ‘রেল রোকো’ আন্দোলনের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। কাল সন্ধে থেকেই শহরে বাস চলতে শুরু করেছিল। আজ বেলা ১২টা নাগাদ বেঙ্গালুরু-মাইসুরু হাইওয়ে ধরে তামিলনাড়ু যাওয়ার বাস পরিষেবা চালু হয়।
তা হলে কি পড়শি রাজ্যের সঙ্গে সব বিবাদ মিটে গেল? ‘কাবালি-কাহিনি’ কিন্তু তা বলছে না। তামিল সুপারস্টার রজনীকান্তের ‘কাবালি’ মুক্তি পেয়েছিল জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। সেই আনন্দে তখন চেন্নাইয়ের মতো বেঙ্গালুরুতেও কয়েকটি অফিস ছুটি ঘোষণা করেছিল। এ বার? বিদ্বেষের আঁচ পোহাতে হচ্ছে সুপারস্টারকেও। বুধবারও শহরের যত্রতত্র দেখা গেল কাবালির ছেঁড়া-পোড়া পোস্টার। কাবেরীর জলভাগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নয়া নির্দেশ আসার পরেই বেঙ্গালুরুর বেশ কয়েকটি শহরের সিনেমা হল তামিল ছবি দেখানো বন্ধ করেছে। ছাড় নেই কাবালিরও!
কিন্তু সুপারস্টার হওয়ার আগে যে রজনীকান্ত দীর্ঘ সময় এই বেঙ্গালুরুতেই দিনের বেলায় বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন, আর রাতে চুটিয়ে নাটক করেছেন, তাঁকেও কেন নিশানা করা হল? তিনি তো বেঙ্গালুরুবাসীরও ‘নাম্মা রজনী’ (আমাদের রজনী)!
এটা প্রথম নয়। ২০০২-এ রজনীকান্ত তামিলনাড়ুর হয়ে জলের ভাগ চেয়ে অনশনে বসেছিলেন। চেন্নাইয়ের মঞ্চ থেকে সরাসরি সমালোচনা করেছিলেন কর্নাটক সরকারের। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল কলিউডের একটা বড় অংশ। যার ফলও রজনীকে ভোগ করতে হয়েছিল হাতেনাতে। সে বার বেঙ্গালুরুর অধিকাংশ হল আটকে দিয়েছিল রজনী-অভিনীত ‘বাবা’। ২০০৮-এও একই রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। সে বার কাবেরী থেকে তামিলনাড়ুর গ্রামে গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে (হোগেনাক্কাল প্রকল্প) সওয়াল করেছিলেন তিনি।
এ বার বরং কাবেরী নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ‘রোবো-২’-এর শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত রজনীকান্ত। কর্নাটকের একাংশ তবু মুখ ফিরিয়েই রেখেছে। রজনী কেন কিছু বলছেন না, উল্টে সেই প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নিজের রাজ্য থেকে। চেন্নাইয়ে তাঁর বাড়ির চারপাশে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন।
জল-বিবাদ মিটল কি না, সংশয় থাকছেই। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আজ ফের দাবি করেছেন, ১৫ হাজার তো দূরের কথা, তামিলনাড়ুকে যে ১২ হাজার কিউসেক করেও জল ছাড়া সম্ভব নয়, এটা আদালতকে বুঝতেই হবে। জয়ললিতাও সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছেন বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি তাঁরও কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বেঙ্গালুরু। অথচ ইনিও কন্নড়। জন্ম, দক্ষিণ কর্নাটকের মাণ্ড্য জেলায়। এক সময় যেখান থেকে সব চেয়ে জোরালো তামিল বিরোধী স্লোগান উঠেছিল।
সে-ও কাবেরীর জল-ভাগ নিয়েই!