প্রতীকী চিত্র।
মণিপুরে নাগা জেলা গড়া নিয়ে চলতে থাকা বিতর্ক ও অশান্তি শেষ পর্যন্ত এনএসসিএন আই-এম ও কেন্দ্রের শান্তি আলোচনাতেও ধাক্কা দিল। আই-এম এই প্রথম স্পষ্ট জানাল, তারা নাগাদের অধিকার রক্ষায় যে কোনও রাস্তা নেবে। রক্তপাতের জন্য তাদের দোষ দেওয়া চলবে না। ভারত সরকারকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলে জানিয়ে শান্তি আলোচনাও অর্থহীন বলল তারা।
মণিপুর সরকার বারবার মণিপুরের অশান্তি ও পুলিশ কনভয়ে হামলার জন্য আই-এম বাহিনীকে দায়ী করে সংঘর্ষবিরতি ভাঙা ও শান্তি আলোচনা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছিল। আই-এম বাহিনীকে মদত দেওয়ায় বিজেপিকেই কাঠগড়ায় তোলে কংগ্রেস। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু মণিপুর সফরে এসে বলেছিলেন মণিপুরের পরিস্থিতির সঙ্গে ইন্দো-নাগা সমস্যা এক করে দেখা ঠিক হবে না।
আজ আই-এমের তরফে সরাসরি মণিপুরের নাগা এলাকাগুলি বিভাজনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হল, ভারত সরকারের মদতেই মণিপুর সরকার ও মণিপুরের রাজ্যপাল নাগাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। সামনে শান্তি আলোচনা চালিয়ে পিছনে নাগাদের বিরুদ্ধে বিভেদনীতি চালানোয় নাগা সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তোলে তারা।
আরও পড়ুন: নাগা স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দিচ্ছে ভারত, দাবি মুইভার
আই-এম বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্যই শান্তিচুক্তির প্রস্তাবনা স্বাক্ষর করা হয়েছিল। চালানো হচ্ছে ১৮ বছর ব্যাপী আলোচনা। নাগারা বৃহত্তর নাগালিমের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভেঙে ভারত সরকার নাগাদের মত না নিয়েই মণিপুরে নাগা এলাকাগুলি ভাগ করে ফেলল। কেন্দ্রের সম্মতি ছাড়া রাজ্যপাল নাজমা হেপতুল্লা নতুন জেলা গঠনে মত দিতেন না। মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সামনে কেন্দ্রের সমালোচনা করলেও বোঝা যাচ্ছে ভিতরে কেন্দ্র ও মণিপুর সরকারের আঁতাত রয়েছে। তাঁর ডাকে ভারত সরকার মণিপুরে নাগাদের অবরোধ দমনে নাগড়ে বাহিনীও পাঠাচ্ছে। এভাবেই কি ভারত-নাগা সমস্যার সমাধান করার কথা ভাবছে ভারত সরকার?
আই-এম স্পষ্ট জানায়, নাগারা তাঁদের এলাকায় কোনও পক্ষের অবৈধ দখলদারি মানবে না। ভারত সরকার মণিপুরে মেইতেইদের তুষ্ট করতে এলাকা ভাগে মদত দিয়েছে। আই-এম ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, কিন্তু ভারত তা করল। নাগাদের দমনে আধা সেনা মোতায়েন করে মোটেই ভাল করেনি কেন্দ্র। এর ফলে নাগাদের কাছে এতদিনের শান্তি আলোচনা অর্থহীন মনে হচ্ছে। ইবোবি ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ডাকও স্বীকার করেননি। তাই শান্তি দূর অস্ত। কেন্দ্রের প্রতি বিশ্বাসই হারাচ্ছে আই-এম। বিবৃতিতে আই-এম স্পষ্ট বলেছে, "এবার থেকে আমরা আমাদের জমি যে কোনও উপায়ে রক্ষা করব। ইবোবিকে নাগাদের উপরে আর অত্যাচার চালাতে দেওয়া হবে না। এরপর যা কিছু 'খুব খারাপ' ঘটবে- তার জন্য আমাদের দোষ দেওয়া চলবে না।" এ দিনের বিবৃতির পরে মণিপুরে নাগাদের তরফে নাশকতা বাড়বে বলে পুলিশ ও প্রশাসনের আশঙ্কা। রাজ্যে ৪০ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এনএসএফ অবরোধ তুললেও অবরোধ চালাচ্ছে ইউএনসি।