শ্রীনগরে সমাধিস্থলের প্রাচীর টপকানোর চেষ্টা করছেন ওমর আবদুল্লা। (ইনসেটে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
শ্রীনগরে ‘শহিদদের সমাধি’তে গিয়ে অবশেষে সোমবার শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। জানালেন, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাধা দিলেও কাজ হয়নি। ১৯৩১ সালে কাশ্মীরের রাজা হরি সিংহের ডোগরা বাহিনীর হাতে নিহতদের সমাধিতে সোমবার শ্রদ্ধা জানাতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একটি ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন ওমর। তাঁর অভিযোগ, রবিবার তাঁকে এবং কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। সমাধিস্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। সোমবার তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়, মর্মান্তিক, লজ্জাজনক’।
সোমবার পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একটি ভিডিয়ো এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে ওমর লেখেন, ‘‘১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফতিহা পড়েছি। অনির্বাচিত সরকার আমার পথ আটকানোর চেষ্টা করেছিল। নওহাট্টা চক থেকে আমায় হাঁটতে বাধ্য করেছে। ওরা নকশবন্দ সাহাব সমাধিস্থলের দরজা বন্ধ করে আমাকে প্রাচীর টপকাতে বাধ্য করে। আমায় জাপটে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু আজ থামিনি।’’ এই নিয়ে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপালের দিকেও আঙুল তুলেছেন।
ওমর সোমবার জানিয়েছেন, ১৩ তারিখ, রবিবার শহিদ দিবসেই তিনি সমাধিস্থলে যেতে চেয়েছিলেন। ওই দিনে সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করাই রীতি। কিন্তু সকাল থেকে তাঁর বাড়ির সামনে বাঙ্কার রেখে দেওয়া হয়। তাঁকে ‘গৃহবন্দি’ করা হয়। রাত পর্যন্ত বাড়ি থেকে বার হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওমর। অবশেষে সোমবার পুলিশকে না জানিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চেপে সমাধিস্থলে চলে যান তিনি। ওমর পুলিশকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ওরা কতটা নির্লজ্জ দেখুন, সোমবারও আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে। ওই উর্দিধারী পুলিশকর্মীরা আইন ভুলে গিয়েছেন। আমরা কারও দাস নই।’’ এখানেই থামেননি ওমর। তিনি আরও বলেন, ‘‘কী লজ্জাজনক! যাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাঁদের আজ ভিলেন হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কারণ, তাঁরা মুসলিম।’’
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘শহিদদের সমাধিতে যাওয়ায় ভুল কোথায়? এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, এক জন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়, মর্মান্তিক, লজ্জাজনক।’’ প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই এ রাজ্যে এসে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওমর। তিনি জানান, ভয় নেই আর কাশ্মীরে। তাঁর কথার রেশ ধরেই মমতাও রাজ্যবাসীর উদ্দেশে কাশ্মীরে যাওয়ার আবেদন করেন। এ বার ফের ওমরের পাশে দাঁড়ালেন মমতা।
কী হয়েছিল ১৩ জুলাই?
১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই শ্রীনগর জেলের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কয়েক জন কাশ্মীরি। সেখানে বন্দি ছিলেন আবদুল কাদির। এই কাদির ডোগরা শাসক হরি সিংহের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। প্রতিবাদীদের উপর গুলি চালায় ডোগরা বাহিনী। প্রাণ যায় ২২ জনের। তার পরেই প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছিল কাশ্মীরে। তার জেরে কাশ্মীরি মুসলিমদের ক্ষোভ, অভিযোগে নজর দিতে বাধ্য হয় ডোগরা শাসক এবং ব্রিটিশেরা। প্রতি বছর এই ১৩ জুলাই শ্রীনগরে সমাধিস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন রাজনীতিকেরা। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে ওই দিন সমাধিস্থলে কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়ার অনুমতি দেয়নি পুলিশ প্রশাসন।