লোকসভা ভোটের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে থাকা নরেন্দ্র মোদী বলতেন, অঙ্ক নয়, জিতব রসায়নে। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে সে কাজ করেও দেখিয়েছেন। এখন মোদী-বিরোধী মঞ্চের সলতে পাকানো বিরোধীরা বলছেন, অঙ্ক তাঁদের অনুকূলে। প্রয়োজন শুধু রসায়নের।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে সনিয়া গাঁধীর আমন্ত্রণে ১৭টি বিরোধী দল সম্প্রতি একজোট হয়েছে। সামনের শনিবার সেই ঐক্যের ছবি ফের ফুটবে চেন্নাইয়ে। করুণানিধির জন্মদিনে। তার পর অগস্টে পটনায় লালুর সভায়। রাষ্ট্রপতি ভোটের পরেও বিরোধী ঐক্য লোকসভা পর্যন্ত জারি রাখাই এই জোটের লক্ষ্য। কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘গত লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর দল পেয়েছে ৩১ শতাংশ ভোট। আরও কিছু শরিক ও বন্ধু দল মিলে ধরা যাক ৪০ শতাংশ। বিরোধীরা একজোট হলে অনায়াসে বাকি ৬০ শতাংশ ঝুলিতে ভরে মোদীকে হারানো সম্ভব।’’ উত্তরপ্রদেশে যেমন রাহুল-অখিলেশের পাশাপাশি মায়াবতী এলে বিজেপি অঙ্কের জোরেই উড়ে যেত।
কিন্তু বিরোধীরা একমঞ্চে এলেও একজোট হয়ে লড়তে পারবে কি? রসায়ন তৈরি হবে? এ সবই এখন ভাবাচ্ছে বিরোধীদের। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আজ বলেন, ‘‘রাজনীতিতে দুইয়ে দুইয়ে চার সব সময় না-ও হতে পারে। তার ফল শূন্যও হতে পারে কিংবা ২২।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সাম্প্রদায়িক ও জাতিভিত্তিক মেরুকরণের রাজনীতি করে মোদী আসল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চান। বিরোধীরা একজোট হয়ে আসল ছবি ও বিকল্প পথ তুলে ধরতে পারলেই অঙ্ক বদলে যাবে। গত তিন বছরে সরকারের সাফল্য বলতে দেশের ১ শতাংশের সম্পদবৃদ্ধি!’’
আরও পড়ুন: গরু জাতীয় পশু হোক, কেন্দ্রকে বলল রাজস্থান হাইকোর্ট
কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও বলেন, ‘‘দিল্লির সাম্প্রতিক পুরভোটে কংগ্রেসের অন্ধ বিরোধিতা না করে অরবিন্দ কেজরীবাল এক সঙ্গে লড়লে বিজেপি জিতত না।’’ পরেও দিল্লি রাজনীতির অঙ্কেই কেজরীবালকে বিরোধী মঞ্চে আমন্ত্রণ জানাননি সনিয়া। কংগ্রেসের অনেকের আশঙ্কা, সত্যিই কি মোদীকে ঠেকাতে অখিলেশ-মায়াবতী, তৃণমূল-সিপিএম একসঙ্গে লড়বে? তা না হলে তো ভেস্তে যাবে গোটা প্রয়াস। ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, বিরোধীদের কোনও ভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। আসনের হিসেবে কংগ্রেস মুখ থুবড়ে পড়লেও রাজ্যে-রাজ্যে ভোটের অঙ্ক কিন্তু খুব বেশি কমেনি। সে কারণেই বিজেপিকে আরও বেশি খাটতে হবে।
প্রকাশ্যে বিজেপির বক্তব্য, মোদীর ভয়েই একজোট হচ্ছে বিরোধীরা। লড়াইটা অঙ্কের বা রসায়নের নয়। লড়াই ইতিবাচক ও নেতিবাচক রাজনীতির। মোদীকে রুখতে নেতিবাচক রাজনীতি করছে বিরোধীরা।