‘রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো’। বিহারের কিষান চাচি থেকে উত্তরপ্রদেশের বানানা কিং, প্রত্যেকেই এঁরা কৃষিজীবী। কেউ ছিলেন পর্দানসীন গৃহবধূ, কেউ বা শুধু মাত্র টিস্যু কালচারকে ব্যবহার করে বছরে ২ কোটি পর্যন্ত রোজগার করেছেন। ২০১৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এই কৃষিজীবীরা। কেন এতটা অনন্য তাঁরা?
বিহারের মজফফরপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম আনন্দপুরের এই কৃষিজীবীর নাম রাজকুমারী দেবী। ৮০ দশকে বারবার বন্যায় কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেই জমিতেই চেষ্টার ফলে ধান, গম ফলিয়েছিলেন তিনি। গ্রামীণ মহিলাদের জন্য একটি কেন্দ্র খুলেছেন নিজে। যেখানে জমিকে উর্বর করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাম, জেলি। আচার তৈরির প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
ভেঙ্কটেশ্বর রাও ইয়াদলাপল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের এক কৃষিজীবী। অন্ধ্র ছাড়াও তেলেঙ্গানার কৃষিজীবীদের প্রশিক্ষণ দেন। অসংখ্য কৃষিশিক্ষার পত্রিকা সম্পাদন করেন। পশুপালন সংক্রান্ত বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেন।
বল্লভভাই ভাশ্রমভাই মারভানিয়া গুজরাতের জুনাগড়ের কৃষক। বয়স ৯৭। ১৯৪৩ সালে প্রথম গুজরাতবাসীকে গাজর চেনান। গুজরাতের মানুষ জানতেন না, এটা মানুষও খেতে পারে। জুনাগড়ের নবাব মহম্মদ মহব্বত খান-৩ দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যান। তিনিই গাজরের কদর করায় তা আস্তে আস্তে গ্রহণযোগ্য হয়। ৫ একর জমিতে ডাল-সহ অন্য শস্যও ফলাতেন বল্লভভাই।
কানওয়াল সিংহ চৌহান। বয়স ৫৭। হরিয়ানার সোনিপতে এইচএম-৪ হাইব্রিড বেবি কর্ন চাষ করেন এই এমএ এলএলবি কৃষিজীবী। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেবি কর্ন উৎপাদন হয় তাঁর গ্রামেই। ১৯৯৭ সালে সুইট কর্ন, টোম্যাটোও চাষ শুরু করেন। স্থানীয় ৫ হাজার কৃষিজীবী উপকৃত হন এতে।
ওড়িশার কোরাপুটের কমলা পূজারী সমাজকর্মী কৃষিজীবী। বয়স ৭০। ‘কেমিক্যাল ফার্মিং’ নিয়ে তাঁর আন্দোলনের জন্য পেয়েছেন সম্মান। ধান, কালো তিল, কালো জিরে, ধনে, হলুদ, ১০০-রও বেশি ধানের প্রজাতি সংরক্ষণ করেছেন তিনি।
রাজস্থানের জগদীশ প্রকাশ পারেখ। অজিতগড় গ্রামে ফলিয়েছেন একটি ২৫.৫ কিলোগ্রামের ফুলকপি, তা-ও একেবারে সনাতন পদ্ধতিতে। লিমকা বুক অব রেকর্ডসে নামও তুলেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সংস্থা তাঁকে মেধাস্বত্ব অধিকার (আইপিআর)-এ দিয়েছে কীটরোধক ফসল ফলানোর জন্য।
রাজস্থানের ঝালওয়ারে মানপুরা গ্রামের বাসিন্দা হুকুমচাঁদ পাতিদার। রাজ্যের স্বামী বিবেকানন্দ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ফার্মের ৪০ একর জমির ফসল তাঁর হাতেই তৈরি। বার্লি, ধনে, রসুন, গম অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে চাষ শিখতে সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন তাঁর কাছে।
ভরতভূষণ ত্যাগী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে নিজের গ্রামে ৩০ বছর ধরে চাষাবাদ করেছেন দেশের অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের অন্যতম জনক। প্রায় ১০ লক্ষ কৃষিজীবী ও তাঁর পরিবারকে প্রশিক্ষণ দেন তিনি এ বিষয়ে।
রাম শরণ বর্মা উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকি জেলার কৃষিজীবী। কলা চাষে ‘টিস্যু কালচার’ প্রয়োগ করেছিলেন প্রথম। প্রতি মাসে ১৫০ একর জমি থেকে মোট ৩-৪ লক্ষ টাকা রোজগার করেন।এই হাই-টেক কৃষিজীবীর কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া কৃষকদের লভ্যাংশও প্রায় ৪ লক্ষের কাছাকাছি। ফলিয়েছেন লাল কলাও। যার দাম প্রতি কিলোগ্রাম ৮০-১০০ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় ২ কোটি টাকার কাছাকাছি।
মধ্যপ্রদেশের পিথাউরাবাদের বাবুলাল দাহিয়া। বয়স ৭২। নিজের ২ একর জমিতে ২০০ রকমের ধানের প্রজাতি ফলিয়েছেন তিনি। লোকগথায় উল্লিখিত ধানের প্রজাতি সংগ্রহ করে সেগুলিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন এই অর্গ্যানিক ফার্মার।