Pandal

কাজ কই! বছর ঘুরেও দিল্লি দূর অস্ত্‌ অসীমের

অক্টোবর থেকে মার্চ—এই ছ’মাসে মেদিনীপুরের সিদ্ধহস্ত শিল্পীদের দিল্লিতে মণ্ডপ তৈরির কাজে ডাক পড়ে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৬:৩২
Share:

ফাইল চিত্র।

আজ বিয়েবাড়ি তো কাল পার্টি। পরশু হয়তো হোটেলের অনুষ্ঠান। প্রায় রোজ ডাক পড়ত মণ্ডপ তৈরির। দু’হাত ভর্তি রোজগার। ওভার-টাইমে বাড়তি আয়। কাজের জায়গাতেই খাওয়াদাওয়া। দিল্লির সেই মাস গেলে ‘মোটামুটি ভাল রোজগারের দুনিয়া’ থেকে অসীম দোলে এখন অনেক দূরে। পূর্ব মেদিনীপুরে পটাশপুর থানার অমরপুর গ্রামে। নিজের ধানের খেতে। লকডাউনের বর্ষপূর্তিতে ফোনে বললেন, ‘‘এখনও দিল্লি ফেরা হয়নি। ফিরেই বা কী হবে? দিল্লিতে এখনও তেমন কাজ মিলছে না শুনেছি।’’

Advertisement

অক্টোবর থেকে মার্চ—এই ছ’মাসে মেদিনীপুরের সিদ্ধহস্ত শিল্পীদের দিল্লিতে মণ্ডপ তৈরির কাজে ডাক পড়ে। কাপড়ের কুঁচির নকশা, বাটাম, ফুলের সাজ। প্রতিদিন অন্তত তিনশো টাকা মজুরি। সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ওভারটাইম। কিন্তু সে তো প্রাক্‌-করোনা যুগের কথা। এখন? ‘‘নিজেদের জমিতেই খাটছি। রোজগারের জন্য কখনও কারও বাড়িতে কাঠ চেরা, মাল ওঠানো-নামানোও করতে হয়। তবু মাসে দশ দিনের বেশি মজুরি জোটে না।’’

ঠিক এক বছর আগে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ। কোভিডে লাগাম পড়াতে মধ্যরাত থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করলেন। প্রথমে ২১ দিনের জন্য। কিন্তু ২১ দিন পরেও লকডাউন উঠল না। প্রথমে রোজগার বন্ধ। তারপরে পুরনো দিল্লির ফতেহপুরীর ভাড়ার ঘরে আটকে পড়া অসীম দোলে, আশিস দাসদের খাবারে টান পড়তে শুরু করেছিল।

Advertisement

ভাত-রুটি জোটাতে না-পেরে দিল্লি থেকে তখন লাখো লাখো পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটেই উত্তরপ্রদেশ, বিহারের রাস্তা ধরেছেন। অসীম, আশিসের মতো গ্রামের লোকেরা তখন চেয়েচিন্তে, আধপেটা খেয়েই দিন চালিয়েছিলেন। মাস দুয়েক পরে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হতেই বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু অন্যান্য বারের মতো আর কোভিডের বছরে কালীপুজোর পরেই দিল্লির ট্রেন ধরা হয়নি। লকডাউন ওঠার এত দিন পরেও দিল্লি ফিরলেন না কেন? অসীমের উত্তর, ‘‘আমাদের জনা চল্লিশের দলে জনা বিশেক লোক দিল্লিতে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু কাজকর্ম আগের মতো জুটছে না।’’

এক বছর আগে লকডাউনের জেরে সব থেকে মুশকিলে পড়েছিলেন অসীম-আশিসদের মতো পরিযায়ী শ্রমিকরা। সরকারি হিসেবে, প্রায় ১.২৩ কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে ভিন্‌ রাজ্য থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে হয়েছিল। অনেককেই মাইলের পর মাইল হেঁটে। বাকিদের শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বা বাসে। এই ১.২৩ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদের অর্ধেক, প্রায় ৬১ লক্ষ শ্রমিক তিনটি রাজ্যের—উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ।

এক বছর পরে এই ১.২৩ কোটির মধ্যে কত জন ফের নিজের কাজের জায়গায় ফিরেছেন? কত জনকে পেট চালাতে ধার করতে হয়েছে? কত জন সেই দেনা শোধ করতে পারেননি? কত জন মারা গিয়েছেন? সরকারের কাছে এ সব তথ্য নেই। নীতি আয়োগ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নীতি তৈরির আলোচনা শুরু করেছে। ১৯৭৯ সালের আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইনে রদবদল করে আরও সুরক্ষার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে দাবি।

অসীমরা এ সবের খোঁজ রাখেন না। ধান কাটাই-মাড়াই হবে। তারপরে বর্ষা নামবে। আবার হয়তো মেদিনীপুরের শিল্পীরা রোজগারের আশায় দিল্লির ট্রেন ধরবেন। আপাতত আগের মতো রোজগার না থাকলেও, মেদিনীপুরে ভোটের আঁচ পোয়াচ্ছেন তাঁরা। অসীম বলেন, ‘‘আমাদের সাংসদ শিশির অধিকারী তো বিজেপিতে যোগ দিলেন। পাশের কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ভোটের জোর টক্কর। সারা দেশের নজর এখন এখানকার ভোটের দিকে।’’

ভোট আসবে-যাবে। এক বছর পরে ফের লকডাউন জারি করতে হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলবে। অসীম-আশিসরা হয়তো ভোটের লড়াইয়েই লকডাউনের সময়ের পেটের জ্বালা ভুলে থাকবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন