নীরব মোদীর প্রতারণার মামলায় আরও চাপে পড়ে গেল বিজেপি। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই, বিজেপি এর দায় ঠেলে দেওয়ায় চেষ্টা করে যাচ্ছে কংগ্রেস তথা ইউপিএ আমলের দিকে। কিন্তু সিবিআই-এর দায়ের করা এফআইআর একেবারেই উল্টো কথা বলছে। সিবিআই তার এফআইআর-এ বলেছে— গোটা ঘটনাটাই ঘটেছে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে, অর্থাত্ ২০১৭-১৮ সালে।
দু’দিন আগেই পিএনবি কেলেঙ্কারি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি দাবি করেন— প্রতারণার ঘটনাটি শুরু হয় ২০১১ সালে, অর্থাত্ মনমোহন সিংহের জমানায়। পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আর কোনও প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সেই দাবিকে কার্য উড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দায়ের করা এফআইআর-ই।
এই প্রতারণার মামলায় শনিবার পিএনবি-র প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুল শেঠিকে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় মনোজ খারাট এবং হেমন্ত ভাট নামে আরও দুই কর্মীকে। সিবিআই নতুন করে যে এফআইআর করেছে তাতে নীরব, মেহুল ছাড়াও গোকুল এবং মনোজের নামও ছিল।
আরও পড়ুন: পিএনবি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার-সহ ৩
আরও পড়ুন: হীরা পেলে কত শুনি! হতবাক ইডি-কর্তারা
পিএনবি প্রতারণা মামলা প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল কটাক্ষ করে বলেন, দেশের চৌকিদার যদি ঘুমোয়, তা হলে চোর তো পালাবেই। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলেন, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটল আর প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বলছেন তাঁরা নাকি এ বিষয়ে জানতেনই না! তাঁর অভিযোগ, দেশকে যে লুঠে নেওয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী। বিজেপি দেশের অর্থনীতিকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে।
সিবিআই সূত্রে খবর, প্রতারণার মামলায় জড়িত সন্দেহে ২০১৪-১৭ এই সময়কালীন চার পিএনবি-র আধিকারিককে জেরা করা হচ্ছে। এঁরা হলেন— বেচু বি তিওয়ারি, ইনি মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্ট শাখায় চিফ ম্যানেজার (ফেব্রুয়ারি, ২০১৫-অক্টোবর, ২০১৭) ছিলেন। সঞ্জয় কুমার প্রসাদ, ইনি ব্র্যাডি হাউস শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ( মে, ২০১৬- মে, ২০১৭) ছিলেন। মহীন্দ্র কে শর্মা, ইনি অডিটরের (নভেম্বর, ২০১৫-জুলাই, ২০১৭) পদে ছিলেন এবং মনোজ খারাট, ইনি সিঙ্গল উইন্ডো অপারেটরের (নভেম্বর, ২০১৪-ডিসেম্বর, ২০১৭) পদে ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের মেহুলভাই’ বলে বাড়িতে আপ্যায়ন মোদীর!
আরও পড়ুন: মামা-ভাগ্নে ফিরবেন কি, পাসপোর্ট বাতিল হতে পারে
শুক্রবারেই সিবিআই পাঁচটি রাজ্যের ২৬টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায়। অন্য দিকে, ইডি ১১টি রাজ্যের ৩৫টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৫৪৯ কোটি টাকার গয়না ও হিরে আটক করে। সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সব জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে, সেগুলো কোনও না কোনও ভাবে নীরব মোদী ও মেহুল চোক্সীর সঙ্গে জড়িত। চোক্সীর গীতাঞ্জলি জেমস, গিলি ইন্ডিয়া এবং নক্ষত্র ব্র্যান্ড— এই তিনটি সংস্থাতেও তল্লাশি চালায় তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
সিবিআই সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, চোক্সীর যে তিনটে সংস্থায় তল্লাশি চালানো হয়েছে, তার ৩৬টি শাখা রয়েছে দেশে ও বিদেশে। এর মধ্যে ভারতের ১৮টি শাখায় তল্লাশি চালানো হয়। যার মধ্যে ১৭টি মুম্বইয়ে ও একটি হায়দরাবাদে।