পদপিষ্টে মৃত্যুর পরে বুলেট ট্রেনে কপালে ভাঁজ বিজেপির

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বসে মুম্বইয়ের স্টেশনগুলির পরিষেবা বাড়ানোর জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেন। অর্থবরাদ্দও করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৭
Share:

ভোটের আগে নিজের রাজ্য গুজরাতেই উন্নয়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে নরেন্দ্র মোদী। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে এনে বুলেট ট্রেনের ঘোষণা করে সেই ক্ষত ঢাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুম্বইয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর পরে সেই বুলেট ট্রেন এখন বিরোধীদের পাশাপাশি শরিকদেরও নিশানায়।

Advertisement

কংগ্রেস তো তোপ দাগছেই। রাজ ঠাকরে হুমকি দিয়েছেন, ‘মিথ্যেবাদী’ নরেন্দ্র মোদীর বুলেট ট্রেনের একটি ইটও গাঁথতে দেবেন না মুম্বইয়ে। আর শরিক শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে গত কাল দশমীর সভায় বলেছেন, ‘‘মুম্বইয়ে বুলেট ট্রেন কে চেয়েছে? মোদীর স্বপ্নের জন্য সাধারণ মানুষের স্বপ্ন চুরমার করতে দেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের মৌলিক পরিষেবার জন্য অর্থ নেই, অথচ কোটি কোটি টাকা দিয়ে বুলেট ট্রেন আনা হচ্ছে!’’

আর এখানেই কপালে ভাঁজ বিজেপির। তারা বুঝতে পারছে, বুলেট ট্রেনকে সামনে রেখে যে ভাবে মোদীকে ‘গরিব-বিরোধী’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, সেটি বেশি উদ্বেগের। কারণ, একদিকে এর সঙ্গে জাপানের সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয় জড়িত। অন্য দিকে, বিরোধী থেকে শরিক— সকলেই বলছেন, মোদীর এই বুলেট ট্রেন শুধুই বড়লোকদের জন্য। সাধারণ রেল আম-আদমির জন্য। বিজেপি বুঝতে পারছে, গুজরাত ভোটের দিকে তাকিয়ে মোদী যত বুলেট ট্রেন বলবেন, তত তাঁকে ‘গরিব-বিরোধী’ হিসেবে তুলে ধরা হবে।

Advertisement

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বসে মুম্বইয়ের স্টেশনগুলির পরিষেবা বাড়ানোর জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেন। অর্থবরাদ্দও করেন। বুলেট ট্রেন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজধানী ট্রেন চালুর সময়ও নেতারা বিরোধিতা করেছিলেন। বুলেট ট্রেন নিরাপদ। আর নতুন প্রযুক্তির সুফল পাওয়া উচিত মানুষের।’’

আরও পড়ুন: রাবণ-বধে গিয়ে ধনুক ভাঙলেন মোদী

কিন্তু তাতেও সমালোচনা থামছে না। তাই বিজেপি এখন গোটা ঘটনায় জওহরলাল নেহরুকে টানছে! বিজেপির বক্তব্য, নেহরু-গাঁধীরা যখন বিমানে চড়তেন, তখন বাকি দেশ গরুর গাড়িতে চলত। গোটা দেশ যখন অভুক্ত থাকত, তখন নেহরু অশোক হোটেল বানিয়েছিলেন। মানুষের গায়ে কাপড় থাকত না, নেহরু-গাঁধীদের পোষাক আসত বিদেশ থেকে। ফলে আজ তারা বুলেট ট্রেনের বিরোধিতা করবেই। তা ছাড়া, বুলেট ট্রেনের প্রতি কিলোমিটার খরচ মেট্রো রেলের থেকেও কম।

এ সব শুনে ক্ষিপ্ত বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি দেশের মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে। মুম্বই থেকে অমদাবাদ, এই ৫০৮ কিলোমিটার বুলেট ট্রেনের লাইন পাততে খরচ পড়বে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা! আর যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। আইআইটি অমদাবাদের এক গবেষণা অনুযায়ী, ওই পরিমাণ টাকা ঢেলে মুনাফা করতে গেলে বুলেট ট্রেনকে দৈনিক অন্তত ১০০ বার যাতায়াত করতে হবে এবং গড়ে ৮৮ হাজার থেকে ১ লক্ষ লোককে ট্রেনে চড়াতে হবে! টিকিটের দাম

হবে অন্তত তিন হাজার টাকা। অথচ হিসেব বলছে, তিন হাজারের কম টাকায় মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মুম্বই থেকে উড়ানে অমদাবাদে পৌঁছনো যায়। এর পরেও যদি মোদী দেশে বুলেট ট্রেন চালান, তা হলে বলতে হবে, তিনি শুধুই বড়লোকদের প্রধানমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন