Rahul Gandhi

Rahul Gandhi: ‘ক্যাপ্টেন’ দড়ি কাটলেন রাহুল, পঞ্জাব-জয়ে সংশয়

কংগ্রেস সূত্রের খবর, অমরেন্দ্র স্পষ্ট ভাষায় সনিয়া গাঁধীকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা পঞ্জাবে কংগ্রেসকে ভোট জেতাতে পারবেন না, কিন্তু দু’জনেই তাঁকে অপমান করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:১৮
Share:

ফাইল চিত্র

দড়িতে একটা গিঁটের সঙ্গে আর একটা গিঁট এমন ভাবে বাঁধা ছিল যে কী ভাবে তা খোলা হবে, তা বোঝা কঠিন। বলা হত, যে এই ‘গর্ডিয়ান নট’-এর গিঁট খুলতে পারবেন, তিনিই গোটা এশিয়া শাসন করবেন। প্রাচীন ফ্রিজিয়ার গর্ডিয়ান অঞ্চলে (বর্তমানে তুরস্কে) এই জটিল গেরোর সমাধানে আলেকজ়ান্ডার তাঁর তরোয়াল দিয়ে স্রেফ দড়িটা কেটে দিয়েছিলেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে সরিয়ে রাহুল গাঁধী আলেকজ়ান্ডারের মতো দড়িটাই কেটে দিলেন বলে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন। কিন্তু গিঁট খোলার বদলে দড়িটাই কেটে দেওয়ায় ভূভারত জয় দূরের কথা, পঞ্জাবও কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে কি না, সেই
প্রশ্নও উঠেছে।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের খবর, অমরেন্দ্র স্পষ্ট ভাষায় সনিয়া গাঁধীকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা পঞ্জাবে কংগ্রেসকে ভোট জেতাতে পারবেন না, কিন্তু দু’জনেই তাঁকে অপমান করেছেন। কংগ্রেসের অনেক প্রবীণ নেতা মনে করছেন, অমরেন্দ্রর মতো অভিজ্ঞ নেতাকে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী ‘অপমান’ করায় দলের মধ্যে ভুল বার্তা গেল। দু’জনেই বরাবর অমরেন্দ্র বনাম নভজ্যোৎ সিংহ সিধু বিবাদে সিধুর পাশে ছিলেন। তাঁদের নির্দেশে অমরেন্দ্রকে দিল্লিতে ডেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। নিছক সনিয়া গাঁধীর সম্মানে সিধুকে প্রদেশ সভাপতি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর দরকার হলেও তা সম্মানজনক ভাবে করা যেত।

উল্টো দিকে রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ শিবির বলছে, অমরেন্দ্রকে সরানোর সিদ্ধান্তে ঝুঁকি থাকলেও তা হিসেব কষে নেওয়া সাহসী সিদ্ধান্ত। কারণ দলীয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, অমরেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যে প্রবল জনমত তৈরি হয়েছে। পঞ্জাবের কৃষকদের রাজ্যের বাইরে আন্দোলন করতে বলায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। জালিয়ানওয়ালা বাগের ভোলবদল নিয়ে বিক্ষোভের সময়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। সর্বোপরি বিজেপির বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভের মুখে ক্যাপ্টেনের পক্ষে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কঠিন।

Advertisement

কাকতালীয় ভাবে ঠিক তিন মাস আগে রাহুল গাঁধী দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের সভায় বলেছিলেন, যাঁরা সত্যি কথা বলতে ভয় পান, তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি, আরএসএসে যোগ দিতে পারেন। আজ কংগ্রেস হাই কমান্ডের চাপে অমরেন্দ্রর পদত্যাগের পরে রাহুল শিবির বলছে, অমরেন্দ্র বা অন্য কেউ কংগ্রেস ছাড়তে চাইলে বেরিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু রাহুল-প্রিয়ঙ্কা মোটের উপর এমন একটা অবস্থান নিতে চাইছেন যে, কংগ্রেসে থাকতে হলে তাঁদের সিদ্ধান্ত, দলের স্বার্থ মেনেই চলতে হবে। এখন হারানোর কিছু নেই। হাই কমান্ড অন্তত দৃঢ় অবস্থান নিতে চাইছে। পঞ্জাবের পরে রাজস্থানেও একই সমীকরণ মেনে মুখ্যমন্ত্রী রদবদলের পথে কংগ্রেস এগোবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

পঞ্জাব কংগ্রেসের অমরেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ এবং কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, “হাই কমান্ডকে বুঝতে হবে, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী কোনও নির্বাচন জেতানোর ক্ষমতা রাখেন না। পঞ্জাবে অমরেন্দ্র সিংহ, রাজস্থানে অশোক গহলৌত, ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বাঘেলরাই কংগ্রেসকে জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। হাই কমান্ড যদি নিজেদের ইচ্ছা তাঁদের উপরে চাপিয়ে দিতে চান, তা তাঁরা মানবেন কেন!” কিন্তু রাহুল শিবিরের বক্তব্য, সিধুর সঙ্গে বিবাদ স্রেফ একটা অধ্যায়। অমরেন্দ্র কোনও দিনই রাজ্যের অন্য কোনও নেতাকে সামনে আসতে দেননি। বাকিদের ডানা ছেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অমরেন্দ্রকে সরানোর সিদ্ধান্তের জন্য আজ পঞ্জাবের কংগ্রেস নেতা সুনীল জাখর, পঞ্জাব যুব কংগ্রেসের সভাপতি বৃন্দর ধিল্লোঁ রাহুলকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।

আজ রাহুল দিল্লিতে সোশ্যাল মিডিয়া সেলের কর্মীদের সামনেও নেহরু-গাঁধীর মতাদর্শের কথা বলেছেন। তাঁর আস্থাভাজন দুই নেতা অজয় মাকেন ও হরিশ চৌধরি পঞ্জাবে গিয়ে অমরেন্দ্রকে সরানোর পরেও যাতে বাকি বিধায়করা দলের সঙ্গেই থাকেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সামনে বিধানসভা নির্বাচন। তাই প্রার্থী হওয়ার টিকিট পাওয়ার জন্য এখন হাই কমান্ডের দিকেই নেতারা থাকবেন। কিন্তু অমরেন্দ্রকে সরানোর ফলে কংগ্রেসের মধ্যে কতখানি ফাটল ধরবে, তা পরে বোঝা যাবে।

রাহুল যে ভাবে জাতীয় স্তরে দলকে ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন, সে পথেই হাঁটছেন বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। উত্তরপ্রদেশে তাঁর নেতৃত্বেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়বে দল। তার আগে আজ কংগ্রেসকে ধাক্কা দিয়ে পদত্যাগ করলেন রাজ্যের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠীর প্রপৌত্র ললিতেশ ত্রিপাঠী। উত্তরপ্রদেশে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর এই পদত্যাগে কতটা ধাক্কা লাগবে কংগ্রেসের, তা বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন