‘সিগমা গ্যাং’-এর প্রধান রঞ্জন পাঠক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
গত সেপ্টেম্বর বিহারের সীতামঢ়হীতে রামমনোহর শর্মা ওরফে গণেশকে খুব কাছ থেকে (পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ) গুলি করে খুনের ঘটনার পর শোরগোল শুরু হয়। সেই সময় খুনের দায় স্বীকার করেছিল ‘সিগমা গ্যাং’! সেই গ্যাংয়ের হোতা রঞ্জন পাঠকের নাম ছিল বিহার পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায়। বুধবার রাতে দিল্লিতে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন সেই রঞ্জন। তিনি ছাড়াও, তাঁর গ্যাংয়ের আরও তিন দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়। তাঁদের মৃত্যুর পর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে গণেশ শর্মার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি।
বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আধিপত্য ছিল ‘সিগমা গ্যাং’-এর। তাদের চোখে যা অপরাধ তার ‘বিচার’ করতেন রঞ্জন। বিচারে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দিতেন ‘মৃত্যুদণ্ড’ও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কেন খুন করা হয়েছে, তার কারণ লিখে রাখতেন। খুনের পর সমাজমাধ্যমে ‘নোট’ প্রকাশ করত ওই গ্যাং। শুধু তা-ই নয়, সংবাদমাধ্যমে ছাপাত তারা। গণেশের খুনের পরও একই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অশান্তি পাকানোর ছক ছিল ‘সিগমা গ্যাং’-এর মাথা রঞ্জনের। তাঁর খোঁজ দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা পুরস্কারেরও ঘোষণা করেছিল পুলিশ। তবে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছিল তাঁকে এবং তাঁর ‘সিগমা গ্যাং’-কে। গণেশকে কেন খুন করা হয়েছিল, তার কারণ লিখে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন রঞ্জন। দাবি ছিল, মোট আটটি ‘দোষে’ দোষী ছিলেন গণেশ। ওই ‘নোট’-এর নীচে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘সিগমা অ্যান্ড কোম্পানি’। আর তার নীচে লেখা ছিল মাত্র তিনটি শব্দ— ‘ন্যায়, সেবা এবং সহযোগ’!
কোন আট ‘দোষে’ গণেশকে ‘দোষী সাব্যস্ত’ করেছিলেন, তা-ও চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন রঞ্জন। সেই আট ‘দোষ’-এর কথা উল্লেখ করে গণেশকে— বিশ্বাসঘাতক, গদ্দার, স্বেচ্ছাচারী, বেইমান, চোর, চরিত্রহীন, পাচারকারী এবং অহঙ্কারী বলে ‘চিহ্নিত’ করেন তিনি।
গণেশ ছিলেন ব্রহ্মর্ষি সেনার সীতামঢ়হী জেলার প্রাক্তন প্রধান। এই বাহিনী মূলত উচ্চবর্ণ ভূমিহারাদের স্বার্থে আওয়াজ তোলে বলে দাবি। মাওবাদী এবং অন্য চরমপন্থীদের দমনে আশি-নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন জমিদারদের পৃষ্ঠপোষতায় তৈরি হয়েছিল ব্রহ্মর্ষি সেনা। সেই গণেশ ‘সিগমা গ্যাং’-এর রোষের মুখে পড়েছিলেন।
গণেশকে হত্যা করার পর যে ‘নোট’ প্রকাশ করা হয়েছিল, সেই ‘নোট’-এ ‘সিগমা গ্যাং’ দাবি করেছিল, তাদের কোনও জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ নেই। তাদের লড়াই মূলত দুর্নীতিবাজ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে সেই গ্যাংয়ের চার সদস্যের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। রঞ্জন ছাড়াও বিমলেশ মাহাতো (২৫), মণীশ পাঠক (৩৩) এবং আমন ঠাকুরের (২১) মৃত্যু হয়। গত কয়েক বছর ধরে বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে বহু অভিযোগে নাম জড়িয়েছে ‘সিগমা গ্যাং’-এর। তোলাবাজির পাশাপাশি ভাড়াটে খুনি হিসাবেও কাজ করে এই দুষ্কৃতীদলের সদস্যেরা।