Hyderabad University

‘রুটি’ নিয়ে রাজনীতি, উত্তাল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়

বেশ কিছু দিন ধরেই রুটি এখানে জ্বলন্ত ইস্যু। ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলন-দলাদলি— আসরে নেমেছে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠনগুলি, প্রশাসন, কর্মী ইউনিয়ন। কিন্তু সমাধানের কোনও ইঙ্গিত নেই। কারণ, সমস্যাটাই বোধহয় অনেক গভীরে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ১৭:৪৬
Share:

ছবি: এবিভিপি

রুটি। ছোট্ট গোলাকার আটার তৈরি এই খাদ্যবস্তুটি নিয়েই রাজনীতির মেঘ গাঢ় হচ্ছে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে দলিত বিরোধী মতাদর্শের প্রতিবাদে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ছাত্রনেতা রোহিত ভেমুলা।

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরেই রুটি এখানে জ্বলন্ত ইস্যু। ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলন-দলাদলি— আসরে নেমেছে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠনগুলি, প্রশাসন, কর্মী ইউনিয়ন। কিন্তু সমাধানের কোনও ইঙ্গিত নেই। কারণ, সমস্যাটাই বোধহয় অনেক গভীরে।

বিষয়টি নিয়ে কিছু দিন আগে আসরে নেমেছে সংঘ প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। তাঁদের দাবি, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল মানের রুটি খেতে পাচ্ছেন না উত্তর ভারত থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা। কখনও চাইলেও মিলছে না। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাতভর ‘রোটি বনাও’ কর্মসূচিও নেয় তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের ‘চাপাটি আপডেটস’। রুটি খেতে না দেওয়ায় ওয়ার্ডেনকে এখন ডাকা হচ্ছে ‘রোটি চোর’ নামে।

Advertisement

আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের অধিকাংশ কর্মীই স্থানীয় মানুষ, তাঁরা দক্ষিণ ভারতীয়। রুটি তৈরিতে তাঁরা সে রকম দক্ষ নন। তাই তাঁদের বানানো রুটি না-পসন্দ উত্তর ভারত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের। কিছু দিন আগে একজন রাঁধুনী অবসর নেওয়ার সমস্যা আরও বাড়ে।

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ডাকে ‘রোটি বনাও’ কর্মসূচি। ছবি: এবিভিপি।

‘রোটি চোর’ বদনামে অভিযুক্ত ওয়ার্ডেন অবশ্য হাত তুলে নিয়েছেন বিষয়টি থেকে। তাঁর দাবি, ২০১১ সাল থেকে ছাত্রছাত্রীদের রুটি দেওয়া হচ্ছে বেশ কয়েকটি হস্টেলে। রাঁধুনি না থাকলেও কোনও রকমে রুটি বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশের ২৯ টি রাজ্যের সবার খাদ্যাভ্যাস আলাদা। সবার পছন্দ মতো আলাদা খাবার তৈরি করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, উত্তর ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কি ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত সম্বর-ধোসা-ইডলি দেওয়া হয়? কর্নাটকি সম্বরের দাবিতে কি দক্ষিণ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ করেন? সেখানে কি ওয়ার্ডেনকে ‘সম্বরচোর’ নামে ডাকা হয়?

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদেরও দাবি, অধিকাংশ ক্যান্টিনেই রুটি দেওয়া হয়। আর দক্ষিণ ভারতে আটা কেনায় ভরতুকি না মেলায় রুটি করতে খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

ওয়ার্ডেন যাই বলুন, ছাত্র সংসদ যাই দাবি করুক, এই মুহূর্তে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারেরও বেশি উত্তর ভারতীয় ছাত্রছাত্রী। আর সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন। রুটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে এই ভোটব্যাঙ্ক এককাট্টা করতে চাইছে এবিভিপি। নির্বাচনে জিতলে ভাল রুটি মিলবে, এই প্রতিশ্রুতিই হাতিয়ার তাঁদের।

আরও পড়ুন: ‘মুসলিমকে ভাড়া দিই না!’ শহরে বাসা খুঁজছেন যাদবপুরের ছাত্রী

২০১৫ সালে বিষয়টি নিয়ে প্রথম আসরে নেমেছিল অবশ্য রোহিত ভেমুলার অম্বেডকর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনই। তাঁদের দাবির পরই ক্যান্টিনে উত্তর ভারতীয় ডাল দেওয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। যদিও সেই দাবির পিছনে রাজনীতি ছিল না, কারণ তাঁদের সংগঠনের অধিকাংশ সমর্থকই ছিলেন দক্ষিণ ভারতের।

আরও পড়ুন: ‘ও আমায় ধাওয়া করেছে...’ ফোন পেয়ে পুলিশ দেখে...

বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য আসছে বিভেদের রাজনীতিকে মূলধন করে ফায়দা তোলার অপচেষ্টার অভিযোগ। উত্তর আর দক্ষিণ ভারতের খাদ্যাভ্যাসের বৈচিত্র যেখানে দেশের সম্পদ নয়, বিভাজনের হাতিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন