দেশের বিভিন্ন পুরসভা থেকে স্বাধীনতা দিবসে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নিদান দেওয়া হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতা দিবসে মাংস নিষিদ্ধ! মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে হবে! এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। বেশ কয়েকটি পুরসভা থেকে এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের মতো দিনে দেশবাসীর স্বাধীনতাতেই হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এই নির্দেশিকার মাধ্যমে। কে কী খাবেন, তা সরকার বা প্রশাসন ঠিক করে দিতে পারে কি? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
ঘটনাচক্রে, এ বছর স্বাধীনতা দিবসের পরের দিনই জন্মাষ্টমী। অনেক পুরসভা থেকে এই দু’দিনই মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নিদান দেওয়া হয়েছে। গ্রেটার হায়দরাবাদ পুরসভার নির্দেশিকা বলছে, ১৫ এবং ১৬ অগস্ট শহরের সমস্ত মাংসের দোকান এবং কষাইখানা বন্ধ রাখতে হবে। হায়দরাবাদের সাংসদ এবং মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বুধবার সমাজমাধ্যমে এর প্রতিবাদ করেছেন। লিখেছেন, ‘‘দেশের নানা প্রান্তে অনেক পুরসভা ১৫ অগস্ট মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, হায়দরাবাদেও এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা সংবিধানবিরোধী। স্বাধীনতা দিবস পালনের সঙ্গে মাংস খাওয়ার কী সম্পর্ক? তেলঙ্গানার ৯৯ শতাংশ মানুষ মাংস খান। তাতে নিষেধাজ্ঞা নাগরিকদের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত পরিসরে, সংস্কার এবং ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ।’’
মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শম্ভাজিনগরেও অনুরূপ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার স্বয়ং তার বিরোধিতা করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বড় বড় শহরে অনেক রকম ধর্ম এবং জাতির মানুষ বাস করেন। যদি এটা কোনও আবেগের বিষয় হত, তা হলে মানুষ এক দিনের জন্য তা মেনে নিতেন। কিন্তু মহারাষ্ট্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসে যদি এমন নির্দেশ দেওয়া হয়, তা হলে মুশকিল।’’
মুম্বইয়ের কাছে ঠাণের কল্যাণ ডোম্বিভালি পুরসভায় মাংসে নিষেধাজ্ঞা জারির পর প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) নেতা আদিত্য ঠাকরেও। পুরসভার কমিশনারের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা দিবসে আমরা কী খাব, সেটা আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা। কী খাব, তা অন্য কেউ বলে দিতে পারে না। আমাদের বাড়িতে তো নবরাত্রির প্রসাদেও চিংড়ি এবং অন্য মাছ থাকে। এটা আমাদের রীতি। এটাই হিন্দুত্ব। আপনারা আমাদের ঘরে ঢুকছেন কেন? পুরসভার উচিত রাস্তার বেহাল দশার দিকে নজর দেওয়া।’’
মহারাষ্ট্রে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার মুখপাত্র অরুণ সাওয়ান্তের দাবি, রাজ্য সরকার মাংসে এই নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেনি। একে ‘সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্য বিরোধীদের চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।