পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তৎপরবর্তী ভারত-পাক সংঘর্ষে কি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে? ওই যুদ্ধবিমানগুলি আমেরিকায় তৈরি। তাই এ বিষয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’কে তারা একটি বাক্যে জবাব দিয়েছে। মেলেনি কোনও স্পষ্ট উত্তর।
আমেরিকার কাছ থেকে এফ-১৬ কিনেছিল পাকিস্তান। পরিসংখ্যান বলছে, ৭৫-৭৬টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইসলামাবাদের কাছে থাকার কথা। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলেছে, তাতে এই যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করা হয়েছিল। পাকিস্তানে এফ-১৬ কখন কী ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলি কী অবস্থায় আছে, তার দিকে সবসময় নজর রাখে হোয়াইট হাউস। এই কাজের জন্য আলাদা কিছু দলও নিযুক্ত রয়েছে, যার নাম টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম (টিএসটি)। ফলে পাকিস্তানে এই মুহূর্তে কতগুলি এফ-১৬ রয়েছে, কী অবস্থায় রয়েছে, তা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য আমেরিকার কাছে থাকার কথা। কিন্তু তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মার্কিন বিদেশ দফতর থেকে বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের এফ-১৬ নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা আপনাদের পাক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছি।’’ আর কোনও মন্তব্য এ নিয়ে করতে চায়নি ওয়াশিংটন।
ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে এফ-১৬ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। কোন পরিস্থিতিতে এফ-১৬ ব্যবহার করা যাবে, চুক্তির শর্তে তা বলে দেওয়া হয়েছিল। আমেরিকার সরকার সেই চুক্তি অনুযায়ীই পাকিস্তানে টিএসটি মোতায়েন করেছিল। চুক্তিভিত্তিক কাজ করে এই দলগুলি। পাক যুদ্ধবিমান সম্পর্কে তারা সবরকম তথ্য রাখে এবং আমেরিকাকে জানায়। ২০১৯ সালে ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে জইশের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময়ও পাক এফ-১৬ ধ্বংস হয়েছে বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। ভারত দাবি করেছিল, অন্তত একটি এফ-১৬ ধ্বংস করা হয়েছে। আমেরিকা সেই সময় পাল্টা দাবি করে, তাদের আধিকারিকেরা ইসলামাবাদের এফ-১৬ বিমান গুনে দেখেছেন। বিমানের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এ বার আর সেই দাবি করা হচ্ছে না আমেরিকা থেকে। বরং প্রকাশ্যে এফ-১৬ নিয়ে কোনও মন্তব্যই তারা করতে চাইছে না।
গত শনিবার বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ বেঙ্গালুরুতে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সিঁদুর অভিযান নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। সেখানে তিনি জানান, সংঘর্ষ চলাকালীন ভারতের হামলায় অন্তত ছ’টি পাকিস্তানি বিমান ধ্বংস হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটিই যুদ্ধবিমান। এখনও পর্যন্ত ভূমি থেকে আকাশে হামলার ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। পাক বিমানগুলি ধ্বংস হয়েছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’-এর মাধ্যমে। অমরপ্রীত বলেছিলেন, ‘‘শাহবাজ় জ্যাকোবাবাদের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছিল। ওখানে একটা এফ-১৬ হ্যাঙ্গার ছিল। তার অর্ধেকই উড়ে গিয়েছে। আমি নিশ্চিত, ভিতরে কয়েকটি বিমান ছিল এবং সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের তথ্য বলছে, ওখানে কয়েকটি এফ-১৬ রক্ষণাবেক্ষণাধীন ছিল।’’
বায়ুসেনা প্রধানের বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ পাকিস্তান। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ বলেন, ‘‘যদি সত্যিটা জানতে হয়, উভয়পক্ষকে তাদের যুদ্ধবিমানের পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে বলা হোক এবং নিরপেক্ষ ভাবে তা যাচাই করা হোক। তবে আমাদের মনে হয়, তাতে ভারত যে সত্যিটা ঢাকতে চাইছে, তা প্রকাশ পেয়ে যাবে।’’ নয়াদিল্লির তরফে খোয়াজার এই দাবির প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত করা হয়নি।