পুরনো হয়ে গেছে ‘অচ্ছে দিন’। নরেন্দ্র মোদীর বর্তমান স্লোগান— ‘নতুন ভারত’। তার অন্যতম প্রধান অঙ্গ, ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার স্বপ্ন। কিন্তু মোদীর সেই স্বপ্নপূরণ করা প্রায় অসম্ভব বলে আশঙ্কা নীতি আয়োগের। আর এতেই নীতি আয়োগের উপরে বিস্তর চটেছে সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন ‘বিজ্ঞান ভারতী’।
সম্প্রতি ‘বিজ্ঞান ভারতী’-র একটি আলোচনা সভায় গিয়ে নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা বেশ কঠিন।
গোটা দেশে কৃষকদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতেই দিল্লির ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’র সভার বিষয়বস্তু ছিল ‘কৃষি পরিস্থিতি: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’। সেখানে রমেশ এ-ও বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেও কৃষি থেকে আয় দ্বিগুণ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি।
মোদীর দেখানো স্বপ্নকে এ ভাবে নস্যাৎ করায় রমেশের উপরে বিস্তর চটেছেন ‘বিজ্ঞান ভারতী’র নেতৃত্ব। সাধারণ সম্পাদক এ জয়কুমারের যুক্তি, ‘‘সঙ্কটের কথা না বলে সমাধানের পথ দেখানো উচিত নীতি আয়োগের। তা না পারলে কাজের পদ্ধতি বদলাক ওঁরা। যদি বাজপেয়ী ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে মোদীর নিশানাও লক্ষ্যচ্যুত, তা হলে নীতি আয়োগ, কৃষি বিশেষজ্ঞ, আমলাদের রাখার কী প্রয়োজন?’’
আরও পড়ুন:এবিভিপি ধাক্কা খেল দক্ষিণেও
নীতি আয়োগ বনাম সঙ্ঘ পরিবারের সংঘাত নতুন নয়। অরবিন্দ পানগড়িয়া উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন সঙ্ঘের আরেক সংগঠন ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ তাঁর সমালোচনা করেছে। শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও নীতি আয়োগের শ্রম নীতি সংস্কারের সুপারিশের বিরোধিতা করেছে।
নীতি আয়োগ সূত্র অবশ্য বলছে, রমেশ চাঁদ নিজেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার পথরেখা তৈরি করেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে কৃষিক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা রয়েছে, কেন কৃষকদের আয় আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করে ফেলা কঠিন, তা-ও মোদী সরকারকে দেওয়া রিপোর্টে জানিয়েছেন তিনি।
কী রয়েছে তাতে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে কৃষকদের আয় বাস্তবে কমেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আগামী পাঁচ বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে হলে শুধু কৃষিতে উৎপাদন বাড়ালেই চলবে না। চাষআবাদের বাইরে রোজগারের সুযোগ, সার-বীজের দক্ষ ব্যবহার, একই জমিতে বহু ফসলের চাষ, পশুপালন, ফসলের সঠিক দামের মতো সাত দফা ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং ঘটনা হল, এগুলো সব সঠিক ভাবে রূপায়ণ করা গেলেও চাষিদের আয় ২০২২-এ দ্বিগুণ করা যাবে না। সব কিছু ঠিক ভাবে চললে তা হতে হতে ২০২৫-’২৬ পেরিয়ে যাবে।
রমেশের হিসেব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যে ২০২২-এর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা বাস্তবায়িত করতে হলে কৃষিতে বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ১০.৫ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। বাস্তব হল, মোদী জমানার তিন বছরে কৃষিতে গড় বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৮ শতাংশ। মনমোহন জমানার শেষ তিন বছরে এই হার ছিল ৩.৬ শতাংশ। ফসলের দাম আমজনতার নাগালের বাইরে গেলেও কৃষকের লাভ হয়নি। উল্টে দেনার দায়ে কৃষি আত্মহত্যা বেড়েছে। এই সব হিসেব করেই অশোক গুলাটি-সহ একাধিক কৃষিবিজ্ঞানী আয় দ্বিগুণকে নিছক স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহেই বিজ্ঞান ভবনের এক অনুষ্ঠানে ২০২২-এর মধ্যে আয় দ্বিগুণ করতে নতুন কৌশল ভাবতে বলেছেন মোদী। রাজ্যগুলির সঙ্গে এক বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ বলেছেন, রাজ্যগুলিও নিজেদের মতো করে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা তৈরি করুক। যার পরে প্রশ্ন উঠেছে, স্বপ্নপূরণ অসম্ভব বুঝেই কি মোদী ও তাঁর মন্ত্রীরা চাষি ও রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলতে চাইছেন?
বিজ্ঞান ভারতীর নেতারা অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। সাধারণ সম্পাদকের দাবি, ‘‘নীতি আয়োগ যদি সমাধান খুঁজে না পায়, তা হলে আমরাই সকলের সঙ্গে কথা বলে আগামী কয়েক বছরে কৃষি সঙ্কটের সমাধানের পথ বের করে ফেলব।’’