কোচি বিমানবন্দরে মহিলা ব্রিগেডের সঙ্গে সমাজকর্মী ত্রুপ্তি দেসাই। ছবি: পিটিআই।
সম্মুখ সমরে সমাজকর্মী ত্রুপ্তি দেসাই এবং শবরীমালার গোঁড়া ভক্তেরা। একদিকে শবরীমালা মন্দিরে আয়াপ্পাস্বামীর দর্শনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ত্রুপ্তি, আর অন্য দিকে কোচি বিমানবন্দরের বাইরে ভক্তেদের বিরাট সমাবেশ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, আয়াপ্পা স্বামীর দর্শন তো দূর অস্ত, বিমানবন্দরের বাইরেও ত্রুপ্তিকে পা রাখতে দিতে নারাজ তাঁরা।
বুধবার ৬ মহিলা তীর্থযাত্রীকে নিয়ে ভূমাতা ব্রিগেডের প্রধান তথা সমাজকর্মী ত্রুপ্তিদেশাই কেরল পৌঁছন। শুক্রবার ভোর ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ ইন্ডিগো-র বিমানে কেরলের কোচি বিমানবন্দরে পৌঁছন তাঁরা। উদ্দেশ্য, দীর্ঘদিনের রীতি উড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শবরীমালা মন্দিরের ভিতরে ঢুকে বিগ্রহ দর্শন করা। কিন্তু তাঁর আগমনের কথা আগাম জেনে যাওযায় কোচি বিমানবন্দরের বাইরে আগে থেকেই প্রচুর ভক্তজড়ো হতে শুরু করেন। ত্রুপ্তি এবং তাঁর সংগঠনের ৬ মহিলাকে ঘিরে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে বিমানবন্দর থেকে বাইরেই বেরতে পারছেন না তাঁরা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর ঘিরে রেখেছে প্রচুর পুলিশ। বিক্ষোভ এড়িয়ে একবার বিমানবন্দরের বাইরে বেরিয়েও পড়েছিল ভূমাতা ব্রিগেড। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের ভয়ে কোনও ট্যাক্সি তাঁদের গন্তব্যস্থলে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি বলে ত্রুপ্তি জানিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ফের বিমানবন্দরের ভিতরেই কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।
এরকম যে কিছু ঘটতে পারে তার একটা ইঙ্গিত অবশ্য আগে থেকেই ছিল ত্রুপ্তি কাছে। তাই আসার আগে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে ই-মেল করে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার অনুরোধ করেন। কবে, কোন পথে, কী ভাবে শবরীমালা মন্দিরে যাবেন তার একটি রুটম্যাপও তিনি জানান। কিন্তু তাঁর জন্য কোনওভাবেই অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্ভব নয়, জানায় কেরল পুলিশ। অন্যান্য শবরীমালা দর্শনার্থীদের জন্য যেটুকু নিরাপত্তা পুলিশ দিচ্ছে, তাঁর এবং তাঁর দলের মহিলাদের জন্যও সেটুকুই করা হবে, জানিয়ে দেয় পুলিশ। আসার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও নিরাপত্তার জন্য চিঠি লিখেছিলেন ত্রুপ্তি। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও সাড়া পাননি তিনি।
আরও পড়ুন: শবরীমালা ফের খুলছে, ব্যর্থ সর্বদল
বিমানবন্দরের বাইরে আয়াপ্পা ভক্তদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স।
ত্রুপ্তি দেশাই বলেন,‘‘আমরা এখানে পৌঁছেই দেখতে পেয়েছি, কোন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাজ্য আমাদের জন্য করেছে। রাজ্য যদি আমাদের কোনও নিরাপত্তা না-ও দেয়, তা সত্ত্বেও আমরা যাবই। কিন্তু আমাদের উপরে হামলা হতে পারে। হামলা এবং খুন করার প্রচুর হুমকি আমি পেয়েছি।’’
এর মধ্যে কেরলের শিল্পমন্ত্রী ই পি জয়রাজন কোচি বিমানবন্দরে নামেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তিনিও ত্রুপ্তি দেশাইকে অনুরোধ করেন ফিরে যাওয়ার। যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে বলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। কোনও অনুরোধেই সাড়া দেননি তিনি।
আরও পড়ুন: গজ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড তামিলনাড়ুর উপকূল, মৃত অন্তত ১৫
মাত্র দু’দিন পরেই ফের দু’মাসের জন্য খুলছে শবরীমালার মন্দিরের দরজা। প্রচুর ভক্ত সমাগম হওয়ার কথা এই সময়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ও। ১০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদেরও আয়াপ্পার বিগ্রহ দর্শন করতে দিতে হবে। এই অবস্থায় কেরল সরকারের কাছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।